• যোগাযোগ
শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home slide

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বিতীয় ভিয়েতনাম হচ্ছে আফগানিস্তান?

আগস্ট ২৭, ২০১৮
in slide, Top Post, মতামত
Share on FacebookShare on Twitter

মাসুম খলিলী

আফগানিস্তান জুড়ে তালিবান দখলদারিত্বের নাটকীয় এবং দৃশ্যত অপ্রতিরোধ্য অগ্রাভিযানে মনে হচ্ছে যে “সাম্রাজ্যবাদীদের কবরস্থান” নামে পরিচিত দেশটিতে দ্রুততম সময়ে ব্যর্থ হওয়ার সর্বশেষ বিদেশী শক্তি হয়ে উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

গত সপ্তাহে রাজধানী থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের কৌশলগত শহর গজনি কয়েক দিনের জন্য তালিবানরা দখল করে রেখেছিল। তারা কয়েক দিন থাকার পর সেখান থেকে আশেপাশের এলাকায় সরে যায়।

পরে রাজধানী কাবুলে তালেবানরা একটি সামরিক-গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ ঘাঁটির উপর বন্দুক হামলা চালায়। এতে মনে হয়েছে তারা মার্কিন-সমর্থিত নিরাপত্তা বাহিনীর অকার্যকারিতাকে তুলে ধরেছে। সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটি আকস্মিক আক্রমণের শিকার হওয়ার মতো বিস্ময়কর ঘটনাই সেখানে ঘটছে।

এর আরও উত্তরে ফরিয়াব প্রদেশে, আফগান ন্যাশনাল আর্মির এক ঘাঁটিতে তালেবানরা হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে হত্যা এবং ৭০ জন বন্দী করে। প্রাদেশিক প্রবীণরা জানিয়েছেন যে, ঘাঁটিটিকে সহজেই তালিবানরা দখল করে নিতে সক্ষম হয় এ কারণে যে সেখানে গোলাবারুদ এবং খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল।

তালেবান হামলার তাৎপর্য

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গজনিতে তালেবান হামলা পরিস্থিতির উপর নাটকীয় প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ জয় করার নতুন কৌশল ঘোষণার প্রায় একবছর পর গজনির রক্তাক্ত এ সংঘর্ষের একটি সুস্পষ্ট মুহূর্ত হতে পারে আমেরিকার আফগান কৌশলের জন্য। ট্রাম্প এখন আফগানিস্তান নিয়ে নতুন কিছু ভাবতে বাধ্য হতে পারেন।

তালেবানদের এই হামলা যতটা সামরিক, ঠিক ততটাই প্রতীকী। গোপনীয় ও অপ্রকাশিত শান্তি আলোচনায় কারণে এই ধারণা জন্মেছে যে, ১৭ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের হয়তো ইতি ঘটতে চলেছে। তালেবানরা এখানে সফলভাবে মার্কিন সব ধরনের সামরিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করেছে। স্থানীয় ও বিদেশী সেনাদের হামলার মোকাবেলা করেছে।

আফগান সরকার এবং মার্কিন বাহিনী এখনও ব্যাপকভাবে আক্রমণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। আফগান সামরিক বাহিনীকে অতি সম্প্রতি নতুন বিদেশী প্রশিক্ষক এবং সরঞ্জাম দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। সর্বোপরি দোহা আলোচনার আগ দিয়ে এবং আলোচনা চলাকালে বিভিন্ন অভিযানে ২২০ তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গজনির হামলা শুধু প্রতিশোধমূলকই নয়, এটা চলমান যুদ্ধের একটা ধারাবাহিকতা। আগের হামলাগুলোর মতোই শহর দখলের জন্য এই হামলা করা হয়নি। এটা তাদের শক্তি প্রদর্শনীর একটা হামলা যাতে এটা মনে করা না হয় যে, তাদের শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়ার অর্থ হলো তাদের শক্তি কমে গেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসন শক্তি প্রয়োগে তাদেরকে আলোচনার টেবিলে বসানোর ব্যাপারে সফল হয়েছে। এই হামলা এটাও দেখিয়ে দিয়েছে যে, আফগান বাহিনী আসলেই কতটা দুর্বল। কাবুলের কাছাকাছি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটা শহরে টিকে থাকার মতো শক্তিও তাদের নেই।

এই হামলা হয়তো আলোচনাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারে, তবে তালেবানরা তাদের এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে শুধু বাড়তি কিছু শহর ও গ্রামের নিয়ন্ত্রণই নেবে না, বরং পরবর্তী প্রতিটি আলোচনার টেবিলে এটাকে তারা দর কষাকষির জন্য কাজে লাগাবে। এই হামলা তাই শান্তি আলোচনাকে জটিল করবে না, পরবর্তীতে আলোচনার টেবিলে এটা তালেবানদের বাড়তি শক্তি দেবে।

ইরানকে শত্রু বানানোর কৌশলগত ভুল

আফগানিস্তানে আমেরিকার বার বার ভুল করা এবং তার অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমেই নিজের জন্য দুর্ভোগ ডেকে এনেছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে, প্রতিবেশী ইরানের সাথে মুখোমুখি সংঘাতে যাওয়া এবং তেহরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা আফগানিস্তানে তার ভাগ্য বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। এটি হলো দেশটির কৌশলগত ভুলের এমন এক বিন্দু, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নিজের জন্য সামরিক কবর খনন করছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালানোর সময় তার মিত্র নর্দার্ণ এলায়েন্সকে সর্বোতভাবে সহায়তা করে ইরান।

এখন প্রতিবেশী ইরানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রাসি নীতিটিই একটি নির্ণায়ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানকে পঙ্গু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আফগানিস্তানে নিরাপত্তার জন্য এখন বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত মে মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সৃষ্ট ইরানের অর্থনীতির দুরাবস্থা আফগানিস্তানে সরাসরি বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে। হাজার হাজার অভিবাসী আফগান কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স আফগানিস্থানে ফিরে যাওয়া পরিবারের জন্য একটি প্রধান অবলম্বন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি অর্থনীতি ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে। আফগানিস্তানের প্রবাসি কর্মীরা ইরান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে পারে যা আফগানিস্তানের অর্থনীতির বেশিরভাগ সময় ধরে টিকে থাকা রেমিট্যান্সকে আরো হ্রাস করবে।

ইরানের উপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞার আরো একটি অর্থনৈতিক প্রভাব দেখা যাবে। এতে ভু-বেষ্টিত আফগানিস্তান আমদানি ও রপ্তানির জন্য ইরানী সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে না। ইরানের সাথে ব্যবসা করার জন্য যে কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন যে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেতা থেকে আফগানিস্তানকেও ছাড় দিচ্ছে না। এতে ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং ভারত মহাসাগরে তার বাণিজ্য পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

ওয়াশিংটন নভেম্বরে ইরানের উপর সর্বাত্মক তেল নিষেধাজ্ঞা চায় যার অনিবার্য পরিণতিতে আফগানিস্তানে সামাজিক অবস্থার অবনতি হবে। এটি আফগানিস্তানে তালেবানের সমর্থন আরো চাঙ্গা করবে এবং মার্কিন সমর্থিত আফগান বাহিনীকে আরো বেশি ভঙ্গুর করে তুলবে।

ইরান তালেবানকে গোপনভাবে সামরিক সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বিপদজনক করতে পারে। ইরান উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি করায়ত্ত করেছে। এই সপ্তাহে তেহরান একটি নতুন রাডার-সম্মৃদ্ধ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে। আমেরিকার সরকার অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, এর বিপরীতে তেহরান যদি তালেবান যোদ্ধাদের এসব অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে আঘাত করার প্রচেষ্টা করে তবে তা মোটেই বিস্ময়কর কিছু হবে না।

এইভাবে, ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ওয়াশিংটনের তা আফগানিস্তানে তার সামরিক ক্ষেত্রে গুরুতর বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আর আমেরিকার দীর্ঘতম বিদেশ যুদ্ধটি তার জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক এবং বেদনাদায়ক হতে পারে।

আঞ্চলিক হিসাব নিকাশ

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশে সফরে যায় তালেবানদের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিপক্ষের কাছে তালেবানরা এই পরিস্কার বার্তা দিয়েছে যে, তাদের আঞ্চলিক গ্রহণযোগ্যতাই শুধু বাড়ছে না, বরং রাজনৈতিক শক্তি হিসাবেও তাদের স্বীকৃতি মিলেছে।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, তাসখন্দের সাথে কাবুল ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক উষ্ণ ও সহযোগিতামূলক হওয়ার পরও তালেবানরা উজবেকিস্তান সফর করেছে। আঞ্চলিক হিসেব নিকেশের কথা বিবেচনা করলে – যেখানে তালেবানরা শুধু একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করছে না, বরং আই এস এর বিরুদ্ধে একটি শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে এটা ধরে নেয়া যায় যে, উজবেকিস্তান শুধু বাহ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আর আফগান সরকারের সাথে সম্পর্কটুকু নিয়েই ব্যস্ত নেই। তাদের নিজস্ব প্রয়োজনও আছে।
উজবেকিস্তান তাই হিসাব নিকাশ করেই রাশিয়ার সাথেও তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তালেবানদের আগমনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে উজবেকিস্তানের কামিলভ তালেবানদের সম্ভাব্য আগমন নিয়ে রাশিয়ার ল্যাভরভের সাথে আলোচনা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ ও সহযোগিতা নিয়েও কথা বলেন।

যদি চলমান আলোচনা এবং গজনিতে সাম্প্রতিক হামলা থেকে কোনকিছু বোঝার থাকে, তাহলে সেটা হলো তালেবানদের কূটনৈতিক বা সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানরা এই দুর্বলতাটাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে যাবে। আফগান বাহিনীর উপর চাপ বাড়িয়েই যাবে তারা। কার্যত তারা আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং চালিয়ে যাবে গেরিলা যুদ্ধও। আঞ্চলিক দেশগুলো তালেবানদের বৈধ শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এর মাধ্যমে তাদের শক্তি শুধু বাড়বেই। প্রতিবেশি দুই বড় শক্তি চীন ও রাশিয়ার এ ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র কি করবে?

কারো কারো আশঙ্কা ট্রাম্প সহজেই আফগানিস্তানে মার্কিন প্রতিশ্রুতির রাশ টেনে ধরবেন। অন্যরা আশা করেন যে তালিবান এবং তার সমর্থকদের পরাজিত করার জন্য ট্রাম্প অপ্রচলিত কৌশলগুলি বিবেচনা করবেন। আগামী সপ্তাহগুলিতে তিনি যে কৌশল নেবেন তার প্রভাব দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের কেন্দ্রে থাকবে পাকিস্তান। ভারতকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ প্রস্থান করতে পারবে এমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে ওয়াশিংটনকে মনোযোগি হতে হবে পাকিস্তানের প্রতি। ইমরান খানের নতুন সরকার এক্ষেত্রে বিশেষভাবে ইতিবাচক হতে পারে। ওয়াশিংটন আশা করছে যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি যুক্তিসঙ্গত রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দিকে তালিবানকে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। যদিও এমন কোনও প্রমাণ নেই তালেবানরা তাদের অবস্থানে কোন আপোষ করবে।

গত সপ্তাহান্তে এক বিবৃতিতে, তালিবান প্রধান মোল্লা আখন্দজাদা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক যোগাযোগের স্বাগত জানিয়েছেন তবে অবাস্তব প্রস্তাব দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের সমালোচনা করে বলেছে এটি কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে।

আফগান তালেবানদের অন্যতম প্রধান দাবি হলো আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়া। সেই সাথে, তালেবানরা এটাও বলে এসেছে যে, তারা শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, কিন্তু সেটা হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে, আফগান সরকারের সাথে নয়।

কার্যত, ২৩ জুলাইয়ের মার্কিন-তালেবান দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে তালেবানদের স্ট্যাটাস যুক্তরাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তালেবানরা বহুদিন ধরে এটাই কামনা করে এসেছে। তালেবানরা নিজেদেরকে ‘অপেক্ষমান সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করে, শুধু একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়। তালেবানরা স্পষ্টতই একটা শক্তির জায়গা থেকে কাজ করছে এবং দর কষাকষি করছে।

কাবুলের জন্য বিকল্প

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আবারও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। এই সময় এটি করা হয়েছে ঈদুল আযহা থেকে তিন মাস সময়ের জন্য। এরমধ্যে কাবুল এবং তালিবান উভয়ই আটক কিছু বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। গত জুন মাসে ঈদের ছুটির সময় তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল তালেবান। যুদ্ধবিরতির পর থেকেই, আফগানিস্তানে সরকারি ও বেসামরিক লক্ষ্যমাত্রাগুলির উপর তালেবান আক্রমণের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি তালেবানদের শর্তহীন আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোর মাত্র কয়েক মাস পরে জুলাইয়ের দোহা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নিজের দিক থেকে প্রেসিডেন্ট ঘানি যথেষ্ট বিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন এবং ছাড় দিয়েছেন। তিনি এমনকি সংবিধান সংশোধনের কথাও বলেছেন। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েও তিনি আফগানিস্তানের শান্তির জন্য তালেবানদের আলোচনায় আনতে চেয়েছেন।

তালেবানদের “আলাপ ও যুদ্ধ” পদ্ধতিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয় এগারোর হামলার পর তালিবানকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণকারী রাজনৈতিক জোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করেছে। জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে তালেবানদের সাথে আলোচনা হবে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণের নামান্তর।

দ্বিতীয় ভিয়েতনাম হবার হাতছানি?

এতো কিছুর পরও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির কোন পথ দেখা যাচ্ছে না এখনো। ১৭ বছর ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কোটি কোটি ডলার খরচ করার পরও তালিবান বিদ্রোহীরা কাবুলের ওয়াশিংটন-সমর্থিত সরকারকে আঘাত করতে সক্ষম বলে মনে হচ্ছে। শুধু আফগানিস্তানে নয়, এটি যে কোনো পরিমাপে ওয়াশিংটনের সাম্রাজ্যীয় উচ্চাকাঙ্খার জন্য একটি ঐতিহাসিক পরাজয়।

এই আফগানিস্তান এক সময় “সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিয়েতনাম” হয়ে উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রজিজিনস্কিদের মতো পরিকল্পনাকারীরা আফগানিস্তানকে এভাবে উল্লেখ করে আনন্দ পেতেন। এর কয়েক বছর আগেই ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এধরনের অবস্থায় পড়েছিল। ১৯৭৯ সালে কাবুলের সহযোগী সরকারের পক্ষে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে ঢুকে পড়েছিল।

এর এক শতাব্দী আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সৈন্যদের মত সোভিয়েতরা আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ে নির্ভীক প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে পরাজিত হয়েছিল। অবশ্যই সোভিয়েতরা শুধু আফগানদের হাতে পরাজিত হয়েছে এমন নয়। সিআইএ তাদের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্র শস্ত্র দিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি যেন ঠিক উল্টো। আগে যারা সরকারকে সহায়তা করেছিল তারা এখন বিরোধি পক্ষে। বিরোধিদের মদদদাতারা এখন সরকারকে টিকিয়ে রাখার ভূমিকায়।

তবে কঠিন বাস্তবতা হলো সেই “সোভিয়েত ভিয়েতনাম” এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বিতীয় ভিয়েতনামের মতো আরেক মরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন আফগানিস্তানে আল কায়েদাকে প্রতিশোধের একটি লক্ষ্যে পরিণত করে যে সংগঠনটিকে আগে তারা সাহায্য করেছিল।

প্রায় ১৭ বছর পর, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী এখন দৃশ্যমান প্রস্থান পরিকল্পনা ছাড়াই নতজানু হয়ে পড়েছে। যুদ্ধটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কালকে অতিক্রম করে (১৯৬৪-৭৫) আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের তুলনায় আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হতাহতের সংখ্যা কম হলেও দেশটিতে মার্কিন আর্থিক খরচের পরিমাণ প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জাতীয় ঋণ ২১ ট্রিলিয়ন ডলারের এক চতুর্থাংশের ।

ওবামা প্রশাসনের সময় ২০১৪ সালে মার্কিন সামরিক অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করার কথা বলা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচার শুরু করেন তখন তার ভোটারদের অঙ্গীকার করেছিলেন আফগান যুদ্ধ থেকে তিনি প্রত্যাহার করবেন। তবে গত বছর, ট্রাম্প আফগানিস্তানে সামরিক সম্পৃক্ততা পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য পেন্টাগনের পরামর্শে সম্মতি জানান।

গত সপ্তাহের তালেবানের দু:সাহসিক হামলায় মনে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত সরকারি বাহিনী একটি হেরে যাওয়া যুদ্ধে লড়াই করছে। দেশের বেশিরভাগ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এমনকি রাজধানী ভারী আক্রমণ অভিযানের সুখে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

আফগানিস্তানে প্রায় দুই-দশকব্যাপি এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সবশেষে কথিত ‘সর্বশক্তিমান’ মার্কিন শক্তিটি এখানে নিজের অপরাধ, মূঢ়তা এবং অহংকার দ্বারা পরাজয়ের চূড়ান্ত কবরস্থানই তৈরি করবে বলে মনে হচ্ছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে
Home Post

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য
Home Post

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক
Home Post

হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

মার্চ ২০, ২০২৫

জনপ্রিয় সংবাদ

  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • একজন বীর শহীদ তিতুমীর: মুসলিম জাতির প্রেরণা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রক্তাক্ত ২৮ ফেব্রুয়ারি: নির্বিচার গণহত্যার দিন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির যত মামলা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • সেঞ্চুরিয়ান মানিক ও জাবির সেই সময়ের ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

মার্চ ২০, ২০২৫
ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের বার্তা কী?

ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের বার্তা কী?

মার্চ ১৯, ২০২৫
কী বার্তা দিয়ে গেলেন জাতিসংঘের মহাসচিব?

কী বার্তা দিয়ে গেলেন জাতিসংঘের মহাসচিব?

মার্চ ১৬, ২০২৫
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD