অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাম্প্রতিক সময়ের নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা। এছাড়াও যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক ধর্ষণ কিংবা দুইজনের সম্মতিতে সেক্স বিনিময়ের মতো অপরাধ এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোনো দিন নেই যে দিন ধর্ষণের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে না।
এই অভিযুক্তর তালিকায় শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাহলে প্রশ্ন কেন এই যৌনতার ছড়াছড়ি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌনতা ধর্ষণ-নির্যাতন এখন দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। মূলত দেশের স্কুলগুলোতে সচেতনতার নামে যৌন শিক্ষা বিষায়ক একটি বই দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই অশ্লীলতা। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ‘নিজেকে জানো’ নামক বইটি থেকেই মূলত কিশোর-কিশোরীরা যৌনতার প্রতি আসক্তি হচ্ছে। ৮ বছর আগে যারা কিশোর ছিল। তার এখন ভরা যৌবনে অবতীর্ণ হয়েছে। ক্লাসের সেই পড়াগুলো এখন বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় সচেতনতার নামে যৌনতা ঢুকিয়ে দিয়েছে বইয়ের মধ্যে।
জানা গেছে, সারাদেশে যেসব যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার মাত্র ১০ শতাংশ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার, জীবনের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নষ্টের কথা চিন্তা করে অধিকাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনা গণমাধ্যমের কাছে বলেনা।
দেশের বিভিন্ন স্কুলে বিতরণ করা এই বইটিতে যৌনতায় ভরপুর। বইটির নাম ‘নিজেকে জানো’। কিশোর-কিশোরীদের জন্য রচিত এ বইয়ের নারী-পুরুষের স্পর্শকাতর অঙ্গের নাম উল্লেখ করে এমন খোলামেলাভাবে আলোচনা করা হয়েছে যা হুবহু প্রকাশযোগ্য নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক কি আছে এই বইতে?
বইটিতে ‘শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন’ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে যখন একটি মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছে তখন তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। যেমন, উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয়, বগলে লোম গজায়। এ বয়সে ছেলেদের শরীরের শুক্রাণুযুক্ত রস মাঝে মাঝে মূত্রনালী দিয়ে বের হয়ে আসে, যাকে …বলা হয়।
বইটির ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসা’ শীর্ষক অধ্যায়ে একটি শিরোনাম হলো ‘প্রেম করলে কেন ছেলেমেয়েরা ধরাধরি করে?’ এখানে লেখা হয়েছে প্রেম এমন একটি সম্পর্ক যেখানে প্রেমিক প্রেমিকা দু’জনের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ অনুভব করে, এ অনুভব হতেই তারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি পেতে চায় এবং এ কারণেই অনেক সময় তারা পরস্পরকে স্পর্শ করে। আসলে কোনো সমাজেই এটা ভালো চোখে দেখে না। কৈশোর হলো জীবন গড়ার সময়। এ বয়সে এসব করে তাই সময় নষ্ট না করাই ভালো।
এ অধ্যায়ে আরেকটি শিরোনাম হলো, ‘পরিস্থিতির চাপে যদি দৈহিক মিলনের সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে আমি সে অবস্থায় কী করবো?’ এখানে লেখা হয়েছে, বিয়ের আগে ছেলেমেয়েদের দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কোনো ক্ষেত্রে মেয়েরা পরিস্থিতির চাপে এরকম অবস্থায় পড়তে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, আবেগকে ‘না’ বলতে জানাটাও বড় হওয়ার একটা লক্ষণ। পরিচয়ের একপর্যায়ে দৈহিন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। যদি কারো মনে হয় যে তার প্রেমিক এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী, তবে মেয়েটাকে এ প্রস্তাবে সায় না দিয়ে বড় কারো সাথে বিষয়টি আলোচনা করা ভালো। যদি তা না করা যায় আর দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কোনো অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা জরুরি। এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয় তবে উপদেশের জন্য তুমি কাছের কোনো ক্লিনিকে যেতে পারো। (বইটির শেষে বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত বেশ কয়েকটি কিনিক/সেবা সংস্থার তালিকা দেয়া রয়েছে এ সংক্রান্ত সেবা গ্রহণের জন্য)।
নিজেকে জানো বইটির আরেকটি অধ্যায়ের নাম ‘দৈহিক সম্পর্ক’। এ অধ্যায়ের শুরুতে লেখা হয়েছে নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন খুবই স্বাভাবিক। তবে এতে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক। অবৈধ যৌনমিলন তা যেকোনো বয়সেই হোক না কেন সেটা অনৈতিক ও সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কই বৈধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
এ অধ্যায়ে একটি শিরোনাম হলো ‘সতী পর্দা কি জানতে চাই?’ এ বিষয়ে যে বিবরণ বইটিতে দেয়া হয়েছে তা প্রকাশযোগ্য নয়।
এ অধ্যায়ে আরেকটি শিরোনাম হলো ‘প্রথম মিলনে কি সব মহিলার রক্ত পড়বে? এই অংশের বর্ণনাও রীতিমতো রগরগে।
দৈহিক সম্পর্ক অধ্যায়ে আরেকটি শিরোনাম হলো ‘মায়ের পেট থেকে কিভাবে বাচ্চা বের হয়ে আসে ?’ এখানে সন্তান প্রসবের যে বিবরণ দেয়া হয়েছে তাও প্রকাশযোগ্য নয়। ‘বাচ্চা কিভাবে হয়?’ শিরোনামে লেখা হয়েছে কিভাবে মায়ের গর্ভে সন্তান আসে তার বর্ণনা।
‘বিয়ের আগে কেউ কেউ কনডম বা খাবার বড়ি ব্যবহার করে। সেটা কি ঠিক?’ শীর্ষক শিরোনামে লেখা হয়েছে এ দু’টি জন্ম নিরোধক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
দৈহিক মিলন অধ্যায়ের আরেকটি শিরোনাম হলো ‘অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে তা ক্ষতিকর। এরকম হলে কিভাবে নিরাপদ থাকা যায়?’ এখানেও লেখা হয়েছে অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক থাকলে কনডম ব্যবহার খুবই জরুরি।
বইটিতে যৌনমিলন অধ্যায় আলোচনার আগে কিভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেমেয়েরা পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, সে আকর্ষণ এবং ভালোলাগা প্রকাশের উপায় কী সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া যৌন অনুভূতি প্রকাশের বিভিন্ন উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
বইয়ে লেখা হয়েছে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব দোষের কিছু নয়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে ভালো লাগার পরের পর্যায়ে যৌন অনুভূতি এমনকি যৌন আকর্ষণও সৃষ্টি হতে পারে। এ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে, যেমন চিঠি লিখে, দেখা করে, হাত ধরে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরেকটু কাছাকাছি এসে। যৌন অনুভূতি প্রকাশ করা দোষের কিছু নয়, তবে সেটি হতে হবে দুইজনের সম্মতিতে, মার্জিত ও শালীনভাবে।
নিজেকে জানো বইটিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠা, পরস্পরকে ভালো লাগা বা প্রেমের অনুভূতি প্রকাশের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে প্রথমে। এরপর ভালো লাগা পরের পর্যায় থেকে পরস্পরের প্রতি যে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির আরেকটি অধ্যায়ের নাম ‘আকর্ষণ’। এ অধ্যায়ের একটি শিরোনাম ‘একটা ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক ভাবি। মাঝে মধ্যে স্বপ্নেও দেখি। আগে তো এমন হতো না। এখন কেন হয়?’ এখানে লেখা হয়েছে কাউকে নিয়ে এ রকম ভাবনা হওয়া ভালো লাগার লক্ষণ। এটি আবেগের বহিঃপ্রকাশ, যা সাধারণত এ বয়সে হতে পারে। পরের পর্যায়ে এটি ভালোবাসায়ও রূপ নিতে পারে। কোনো ছেলেকে গভীরভাবে ভালোবাসার আগে তার সম্পর্কে আগেই সব কিছু জেনে নেয়া উচিত।
এ অধ্যায়ে আরো লেখা হয়েছে ছেলে ও মেয়েরা এ বয়স থেকে একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এ ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। ছেলেরা চায় মেয়েদের আকর্ষণ করতে আর মেয়েরা চায় ছেলেদের। এ বয়সে ছেলেমেয়েদের নিজেকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।
ভাবে পুরো বইটিতে অশালীন যৌনতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছেলে-মেয়েদেরকে খারাপ হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন এই বইতে সবই আছে।
এ বই নিয়ে রীতিমতো বিব্রত এবং অস্বস্তিতে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ। প্রশ্ন উঠেছে স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে এ ধরনের বই বিতরণের উদ্দেশ্য নিয়ে। অনেকেই বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের প্রেম শিখানো ছাড়া এর উদ্দেশ্য আর কিছু নয়। এমনিতেই সিনেমা টেলিভিশন ও ইন্টারনেট যৌন বিষয়ে অবাধ প্রচার-প্রচারণা চলছে। আলোচ্য বইটির ক্ষতিকর প্রভাব ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়েছে বলে অনেক শিক্ষক-অভিভাবক উল্লেখ করেছেন। তারা বইটিকে প্রেম যৌনতার ‘হাতে কলমে’ শিক্ষা বলে বর্ণনা করেছেন।
বিশেষ করে জামালপুরের ডিসি কবিরের অনৈতিক কাজের ভিডিও গণম্যামে প্রকাশের পরই সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। অনেকেই বলছেন, এতদিন শিক্ষকরা স্কুলে যা পড়াতেন, ডিসি এখন এসব বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। আর এ অবদান একমাত্র শেখ হাসিনার। উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি সারাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে ধর্ষণও পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আর সাথে তার সোনার ছেলে ও মেয়েরাতো আছেই।