অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২৫ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে তুলে নিয়েছে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ। তাদেরকে এখন পর্যন্ত কোনো থানায় সোপর্দ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
জানা যায়, ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ৫ম পবের্র ছাত্র ও কোটা আন্দোলনের কর্মী তারেক আজিজকে সাদা পোশাকে পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় তার গাজীপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও ও মহাখালীর বিভিন্ন মেসে অভিযান চালিয়ে ঢাকা পলিটেকনিকের ২৫ শিক্ষার্থীসহ আরো অন্তত ৩৯ জনকে তুলে নেয়া হয়।
এদের মধ্যে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার একটি বাসা থেকে ১৬ শিক্ষার্থীকে ও সকাল ৬টায় মহাখালীর রসূলবাগের একটি বাসা থেকে ৮ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। এছাড়া আরো কয়েক যায়গা থেকে আরো ১৫ শিক্ষার্থীকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে তুলে নেয়া ৪০ শিক্ষার্থীর কারো অবস্থানই স্পষ্ট করছে না পুলিশ। তবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। জানা গেছে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু শিক্ষার্থীর পরিবারকে ফোন দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া তারিক আজিজের মা রেহানা আক্তার জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় তাদের কলেজ গেট এলাকার বাসায় আট থেকে দশ জন সাদা পোষাকের পুলিশ এসে পরিবারের সবার সামনে থেকে আজিজকে গ্রেপ্তার করে।
এসময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে, তারা নিজেদের টঙ্গী থানার পুলিশ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেয়। পরে টঙ্গি থানায় যোগাযোগ করতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আজিজকে গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে। আসপাশের কয়েকটি থানায় যোগাযোগ করেও তারিক আজিজের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে তুলে নেয়া শিক্ষার্থী তারেক আজিজের মা, মুজাহিদুল ইসলামের বাবা মাহবুব আলম, জহিরুল ইসলাম হাসিবের বাবা এনামুল হক, রাফির বাবা হেলাল আহমেদ, শাহাদাত হোসেনের ভাই শাহিন ও ইফতেখারুল আলমের ভাই রাশেদ আলমসহ তুলে নেয়া আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের তুলে নেয়ার সত্যতা জানা গেছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিবার ও সহপাঠীরা জানিয়েছেন, তুলে নেয়া শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাদের অনেকে সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও শেষদিকে অংশ নিয়েছিলেন। তারেক আজিজের পরিবার জানিয়েছে আন্দোলনের শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।
ছেলের সন্ধান দাবী করে আজিজের মা বলেন, গভীর রাতে আমাদের চোখের সামনে থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের কথা বেআইনি ভাবে অস্বীকার করছে। যা আমরা কোনভাবেই প্রত্যাশা করিনি।
আজিজসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, এভাবে গ্রেফতারের পর অস্বীকার করে বহু ছাত্রের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেক ছাত্রকে বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে আমরা এখন গভীর উদ্ধিগ্ন হয়ে আছি। তারা অবিলম্বে তাদের নিরপরাধ সন্তানদের সন্ধান ও মুক্তি দাবি করেছেন।