অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চারদিন গুম করে রাখার পর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়া ও মহাখালী থেকে আটক করা ১২ শিক্ষার্থীকে দুটি মামলায় সোমবার গ্রেফতার দেখিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। আজ পুলিশ তাদের কোর্টে হাজির করে জানিয়েছে পুলিশ নাকি ছাত্রদের নয় তারিখ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে।
এই চারদিন আটক ছাত্রদের পরিবারের পক্ষ থেকে তেজগাঁও থানা, ডিবি অফিসসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ তাদের আটকের ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আটক করা হয় প্রায় চল্লিশ জন ছাত্রকে। এই নিয়ে অ্যানালাইসিস বিডিতে রিপোর্ট হয়েছে “২৪ ঘন্টায় কোটা আন্দোলনের ৪০ ছাত্রকে তুলে নিলো ডিবি” এই শিরোনামে।
সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ আটক ছাত্রদের মধ্য থেকে ১২ জনকে আটক রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশের দাবী অনুসারে আটক ছাত্ররা কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো। পুলিশ ১২ ছাত্রকে ডিবি অফিসে নির্যাতন এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমগুলো জানতে পারে ছাড়া পাওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে। কিন্তু পুলিশের কোন দায়িত্বশীল সূত্রই আটক ছাত্রদের কথা স্বীকার করেনি। তারা বরাবরের মতই অস্বীকার করে গেছে।
গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর আটক ছাত্রদের পরিবারের সদস্যরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। তাদের উদ্বেগের খবর অ্যানালাইসিস বিডি সহ দেশের সবগুলো জাতীয় পত্রিকায় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় নয় সেপ্টেম্বর দুপুরে। যদি পুলিশ আটক করে নয় তারিখ সন্ধ্যায় তাহলে কেন তাদের পরিবার সংবাদ সম্মেলন করবে? কেন তাদের পরিবার হন্য হয়ে পুলিশের পেছনে ছুটবে গ্রেপ্তারের আগেই?
ছাত্রদের বিরুদ্ধে যে FIR করা হয়েছে তা অ্যানালাইসিস বিডি’র হাতে এসে পৌঁছেছে। সেখানে লিখা রয়েছে নয় তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় ছাত্ররা নাকি গোপন মিটিং করতে একত্র হয়েছিলো। সেখান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। অথচ এটা সর্বৈব মিথ্যে কথা।
আরেকটি বিষয় হলো এদের সবাইকে একই স্থান থেকে আটক করা হয় নি। তাদের বাসা তেজগাঁও ও মহাখালীর বিভিন্ন স্থানে। তারা বিভিন্ন বাসা থেকে আলাদাভাবে আটক হলেও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে তাদের একটি গোপন মিটিং একইসাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আমরা একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষকের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অ্যানালাইসিস বিডিকে বলেন। পুলিশ বিভিন্ন সময়েই এমন কাজ করে থাকে। এই ঘটনায় নিশ্চিত বুঝা যাচ্ছে যেহেতু ১২ ছাত্র বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল ও মিডিয়া থেকে চাপ এসেছে তাই তারা বাধ্য হয়েছে ছাত্রদের আদালতে হাজির করতে। গত চারদিন তাদের গুম করে রাখার বিষয়টা যাতে আইনীভাবে মোকাবেলা করতে পারে সেজন্যই তারা নয় তারিখ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির বাধ্যবাধকতা যাতে বহাল এজন্যই এই মিথ্যাচার। আইনের শাসন থাকলে কোন দেশে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ সম্ভব নয়।
আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এই ১২ শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে গুজব সৃষ্টিকারীদের মূলহোতা তারেক আজিজ। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ভুয়া আইডি কার্ড, স্কুল ড্রেস, ছাত্রশিবিরের বই, হাতুড়ি, প্লাস, কাটার, ছুরি, তিনটি ল্যাপটপসহ বেশকিছু জিনিসপত্র জব্দ করা হয়।
তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে স্কুল-কলেজের ভুয়া আইডি কার্ড ও স্কুল ড্রেস এগুলো তাদের কাছে ছিল না। এগুলো সাজানো এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেয়া হয়েছে। কারণ আটককৃতদের কেউ স্কুল ছাত্র নয়।