অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে রাজত্ব হারাতে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) থানার দায়িত্বে থাকা ওসিসহ বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা। যারা দীর্ঘ ৫ থেকে ১০ বছরের বেশি সময় যাবত একই স্থানে রাজত্ব করে আসছেন। এরই মধ্যে তাদের আমলনামা তৈরি হয়েছে । চূড়ান্ত ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এমন তথ্য জানাগেছে।
ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমানকে আজ মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রামের নবম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেককেই বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ‘ডিএমপির ৫০ থানার বেশিরভাগেই অফিসার ইন-চার্জ (ওসি), পরিদর্শকদ ও উপ-পরিদর্শকদের বহুদিন কর্মস্থল পরিবর্তন করেনি। এসব কর্মকর্তারা ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে। ডিএমপিতে কর্মরত এ রকম ২৭ জন অফিসার ইনচার্জের তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে পুলিশ সদর দফতর থেকে সরাসরি তাদের বদলি করা হবে জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে। আর তাদের জায়গায় তুলনামূলক এসিআর বা অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট ভালো এমন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পখে।
জানা গেছে, ক্যাসিনো কাণ্ডে বিব্রত সদ্য যোগদান করা ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা ইণ্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশন-আইইডিকে দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছেন যাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোসহ নানা দুর্নীতি-অপকর্ম সংক্রান্ত জোরালো অভিযোগ রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার নিজেই তার যাচাই-বাছাই করছেন বলে দাবি সূত্রের।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ক্যাসিনো চলতো মতিঝিল ক্লাবপাড়ায়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় চলা ক্যাসিনো থেকে মতিঝিল বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকাকালে শিবলী নোমান ঘুষ নিতেন। এ ছাড়া ডিএমপির আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তিনজনের ক্যাসিনো থেকে ঘুষ নেওয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে দুজন কর্মকর্তাকে এর আগে ডিএমপির পৃথক ইউনিটে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ রামপুরা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা ওই থানায় তখনকার রমনা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম শিবলী নোমানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, রামপুরা থানায় আটক দুই সোনা চোরাচালানীকে ছেড়ে দিতে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী নোমান তাঁকে চাপ ও হুমকি দেন।
এছাড়া তৎকালীন সময় উচ্চ আদালতের নির্দেশে অমান্য করে মিথ্যা মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করেছিলো এই শিবলী নোমান। বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের মামলা দিয়ে হয়রানিসহ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমানের বিরোদ্ধে।
গুলশান বিভাগের তৎকালীন উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ এসব বিষয় জানতেন বলে পুলিশেরই একটি সূত্র দাবি করেছেন। গুলশান বিভাগেও একাধিক ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন ক্লাবে মদ-জুয়ার আসর বসতো নিয়মিত। বিভিন্ন ভবনে ভাড়া নিয়ে চলতো স্পার নামে অসামাজিক কর্মকাণ্ড। তিনিও এসব বন্ধে উদ্যোগ নেন নি। বর্তমানে তিনি পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত রয়েছেন।
সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর বন্ধ করার ক্ষমতা নেই মাঠপর্যায়ের পুলিশের। একাধিকবার এসব বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে ডিএমপি কমিশনার বরাবর পাঠানোও হয়েছিল। কিন্তু কোনও নির্দেশনা আসে নি।
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, ডিএমপি কমিশনারের সরাসরি তদারকিতে ইণ্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশন-আইইডি নামে একটি বিভাগ রয়েছে। ওই বিভাগ আইন-শৃঙ্খলাসহ পুলিশের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপকর্মসহ সব তথ্য আপডেট করে নিয়মিত ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। ফলে সদ্যবিদায়ী কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার এসব না জানা থাকার কোনও কারণ নেই। মাঠপর্যায়ের মধ্যমসারির কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষাভাবে জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
সূত্রমতে, র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর ডিএমপি নড়েচড়ে বসেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) তেজগাঁও লিংক রোডের ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালায় ডিএমপির গুলশান বিভাগ। কিন্তু তারা সেখানে অবৈধ কিছু না পেয়ে ফিরে আসে। তার দুইদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাত ১২টার দিকে র্যাব আকষ্মিক অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে মদ, বিয়ার ও অর্থ উদ্ধার করে। আটক করা হয় ৩ জনকে। র্যাবের এ অভিযানের ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি তলানিতে পৌছায়।
জানা গেছে, র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঠিকাদার জি কে শামীমকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ছাড়াও গ্রেফতার অন্য ব্যক্তিরা ক্যাসিনো চালাতে গিয়ে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সহায়তা নিয়েছেন এবং কাদের নিয়মিত মাসোহারা দিতেন তাদের নাম বলেছেন। ডিএমপি কমিশনার সে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।