অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পেঁয়াজের দাম কোথাও কোথাও তিনশ টাকা ছুঁয়েছে, যা একটা বিশ্বরেকর্ড। পেঁয়াজের এই লাগামহীন উর্ধ্বগতির পেছনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা নয় বরং ক্ষমতাসীন সরকার সিন্ডিকেট তৈরী করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটতে এক হয়েছে অন্তত ৯০ ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে মুনাফা বেশি করার সুযোগ থাকায় ৯০ জনের এই সিন্ডিকেটে ৬০ জনই কক্সবাজারের। বাকিরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী। সূত্র বলছে ক্ষমতাসীন সরকার লাগামহীন দুর্নীতি ঢাকতে ও জনগণের টাকা হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই কৌশল ব্যাবহার করছেন সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশাল বাজেটের অর্ধেক টাকাই সরকারের লোকজন কথিত উন্নয়নের নামে ভুয়া প্রকল্প খুলে লুটে নিয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতেই সরকার এখন পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করেছে। গত দেড় মাসে এই পেঁয়াজ থেকে সরকার কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) এর জরিপ মতে, গত অক্টোবর মাসে পেঁয়াজের বাজার থেকে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তখন পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি। স্বাভাবিক দামের চেয়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোথাও কোথাও ৩০০ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে। অক্টোবরের মাসের হিসেবের সঙ্গে যদি চলতি মাসের ১৫ দিনের টাকা যোগ করা হয় তাহলে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার কোটি টাকা পকেটে ঢুকছে। ৮ তারিখ পর্যন্ত পেঁয়াজের বাজার থেকে নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে অক্টোবর মাসের টাকা যোগ করলে দাড়ায় ৩২ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এখন প্রশ্ন হলো-পেঁয়াজের এই মোটা অংকের টাকা কার পকেটে গিয়েছে?
অনুসন্ধান বলছে, পেঁয়াজ কারসাজির সঙ্গে সরকার জড়িত থাকার কারণেই মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড করার পরও দাম কমেনি। এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রীকেও এনিয়ে কথা কম বলতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের সিংহ ভাগই গেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের পকেটে। সরকারের লোকজন যে সিন্ডিকেটের ওপর দায় চাপাচ্ছে এটা একেবারেই ভিত্তিহীন। পেঁয়াজের কারসাজিতে মূল সিন্ডিকেটের ভুমিকা পালন করছে সরকার।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এরকম করতে আগ্রহী না থাকলেও সরকারের চাপে তারা করতে বাধ্য হয়েছে। তবে, এখান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যবসায়ীদের পকেটেও গেছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়ে দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, হত্যা এবং ক্যাসিনো দুর্নীতি ঢাকা হচ্ছে। এর পরে বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে এসব ইস্যুকে ঢাকা হবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের কোন অর্জন না থাকলেও পেঁয়াজের দামে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে-এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেট প্রশাসনের চেয়ে ক্ষমতাশালী হওয়ায় তাদের ধরা হচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধান, চাল, ও গরিবের চামড়ার পর এবার পেয়াজে কামড় দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রোল মডেল এখন একেবারে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। রিজার্ভ ফান্ডে টাকা নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নিতে নিতে সে সুযোগও এখন হারিয়ে ফেলেছে। আর দুর্নীতি লুটপাটের কারণে যখনই রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হয়ে পড়ে তখনই অযৌক্তিকভাবে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। দুর্নীতি লুটপাট করে রাষ্ট্রের অর্থ বিদেশে পাচার করছে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা, আর এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে।