মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ ও প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য মূল্যবান জমি অবৈধভাবে জোর করে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে জোর করে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দখলে দেওয়ার পর এখন স্কুলের খেলার মাঠ দখলে নিতে চাচ্ছে তারা।
বেআইনিভাবে পুরাতন ট্রাষ্টি বোর্ডকে বাতিল করে সরকারি দলের চিহ্নিত ক্যাডারদের দিয়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হয়েছে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনের দিনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আওয়ামী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেটি অনুমোদন করে দেন। এবং একই দিনে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দখলের দিনে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) প্রধানসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সরকার দখলে নেওয়ার পর গুলশানে অবস্থিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র ও আইন অনুযায়ী এই জমিতে কোন রকমের অংশীদারিত্ব মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এই জমির মূল মালিকানা হচ্ছে স্কুল অ্যান্ড কলেজের।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজটি যে জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সেটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনায় জায়গাটি ওই স্কুল ও কলেজের নকশায় দেখানো আছে। রাজউকের সাথে মানারাত ট্রাষ্টের চুক্তি হচ্ছে এই জমিতে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। চুক্তির ২২ নম্বর শর্ত মোতাবেক মানারাত ট্রাষ্ট এই জমি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে দান বা বিক্রি করার অধিকার রাখে না। এই চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে (মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ারও এখতিয়ার রাখে না। অথচ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গুলশানের স্কুলের জমিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তরের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
২০০২ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সকল নথিতেই আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসকে দেখানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ আগেই চেষ্টা করেছিল গুলশানে স্কুলের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আইন ও রাজউকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী এ জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদনের কোন সুযোগ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথম দিকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসাবে গুলশানে স্কুল ও কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বারবার চাপ দিয়ে আসছিল। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত স্থানে ৩৮০০০ স্কয়ারফিটের একটি বিল্ডিং নির্মাণ করে। এই ভবন নির্মাণের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরিদর্শনের সময় নির্মাণকাজ ও নকশার প্রশংসা করেছিল।
এদিকে স্কুল অ্যান্ড কলেজের খেলার মাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ট্রাষ্টি বোর্ড দখলে নেওয়ার অপচেষ্টার খবরে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নেমেছে। স্কুলের পরিবেশ ও খেলার মাঠ রক্ষার দাবীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিয়মিত মানববন্ধনসহ প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরে আবেদন জানাচ্ছে। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের নিয়মিত মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত খেলার মাঠ যথাযথভাবে উন্মুক্ত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর একে একে বিভিন্ন বেসরকারি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের আওতায় গড়ে উঠা হাসপাতাল, ব্যাংক প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করে আওয়ামীরা দখলে নিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক হিসাবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক, যা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে দখলে নিয়েছে আওয়ামীরা। একই কায়দায় দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড দখলে নেওয়ার পর এখন মানারাত স্কুলের জন্য বরাদ্দ করা খেলার মাঠ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীরা।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের মাঠ দখল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ‘মানারাত স্কুল বাঁচাও, আগামী প্রজন্ম বাঁচাও’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গত রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের মানারাত স্কুল ও কলেজের সামনে সচেতন নগরবাসী ও অভিভাবকবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে মানারাত স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের খেলার মাঠ দখলের ঘৃণ্য প্রতিবাদ জানিয়ে নানারকম প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের খেলার মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার কথা বলেন।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আমাদের খেলার মাঠ ছাড়ব না। ‘ মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘স্কুল হচ্ছে মানুষ গড়ার কারখানা, ভালো মানুষ গড়তে ভালো স্কুলের বিকল্প নেই’ ‘মানারাত স্কুলের মাঠ থাকবে, দখলকারীরা পিছু হটবে’ ‘একটি শিশু একটি চারাগাছ, তাকে মহীরুহ করে তুলতে চাই একটি ভাল স্কুল’ ‘শিশুর মেধা ও মনোবিকাশে সহযোগিতা করুন’ -এরকম লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানান।
এক নারী অভিভাবক বলেন, ‘আমি আজ স্কুলে এসে জানতে পারলাম এই মাঠ দখল হয়ে যাবে। আমরা এই স্কুলকে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে চাই না। আমাদের বাচ্চাদের এই মাঠের জন্য এখানে ভর্তি করিয়েছিলাম, যাতে ওরা একটা ভালো পরিবেশ পায়। আমি জানতে চাই আজকে কেন ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে? যে সকল অভিভাবক বাসায় আছেন তারা চলে আসুন, আপনাদের অধিকারের কথা বলুন, আমাদের বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। ‘
Discussion about this post