প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তাঁর দাবি, অর্থমন্ত্রী জনগণের পক্ষ না নিয়ে ব্যাংক লুটেরা ও মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির পক্ষ নিয়েছেন।
অন্যদিকে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।
আজ মঙ্গলবার ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদেরা এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই। দর্শন না থাকলে তাকে বাজেট বলা যায় না। কী বাজেট দিয়েছেন? অর্থমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন রেখে জাপার এই সাংসদ বলেন, এই বাজেট আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ ও দর্শনের সম্পূর্ণ বিরোধী।
কাজী ফিরোজ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বিষ আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। এ দেশের মানুষ একসঙ্গে বিষ আর মধু খায় না। মানুষ এত বোকা নয়।’
ব্যাংকে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ বলেন, ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দেওয়া হবে, এটা মানা যায় না। করপোরেট কর আগের অবস্থায় রাখতে হবে। জনগণের করের টাকায় ব্যাংকের ভর্তুকি দেওয়া যাবে না।
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে কাজী ফিরোজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কোনো দিন ২২ পরিবারের কাছে মাথানত করেননি। আপনি কেন ব্যাংক লুটেরাদের কাছে মাথানত করলেন?’
ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ বলেন, ব্যাংকগুলোতে মানুষের আস্থা নেই। প্রত্যেক ব্যাংক পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। অবাধে লুটপাট চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর মতো এতিম ব্যাংক আর নেই। নিজের ঘরই দেখতে পারেনি, তারা অন্য ব্যাংককে নজরদারি কীভাবে করবে।
কাজী ফিরোজ বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবখানে কে কত বড় আওয়ামী লীগ, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলছে।
সরকারি দলের সাংসদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এত সমালোচনার মধ্যেও অর্থমন্ত্রীর নীরবতায় তাঁরা কিছুটা হতাশ। তিনি আশা করেন অর্থমন্ত্রী কিছু বলবেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক জায়গায় রাস্তা মেরামত বা নির্মাণের এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়। এটা মানুষ ভালোভাবে নেয় না। হাসপাতালে সেবা না পেলে, ডাক্তার না থাকলে মানুষ ভালোভাবে নেয় না। তিনি বলেন, তাঁর এলাকার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, রাস্তা ঠিক করার এক বছরের মাথায় ইট খুলে গেছে কেন, বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণের এক বছরের মধ্যে রড বেরিয়ে গেছে কেন? তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাজেটে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। গত ১০ বছরের বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বাংলাদেশকে দেখে শিখছে, অনুসরণ করছে।
বাজেটের সমালোচকদের উদ্দেশে মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কীভাবে। এর জবাব দিয়েই সমালোচনা করা উচিত।
সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানোর প্রস্তাব না করায় এবার অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আশা করি, বাজেটের পরও অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের ওপর হাত দেবেন না।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, মাদক যুবসমাজকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে। অনেকে পরোক্ষভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করছে। এরা জ্ঞানপাপী। যুবসমাজকে মাদকাসক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ১৯৮২ সালে বেসরকারি খাতে প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই সেগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে, সরকারি প্রশ্রয়েই ব্যাংকে লুটপাট শুরু হয়।
সরকারি দলের সদস্য ফারুক খান বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বিরোধী দলের সদস্য খোরশেদ আরা হক এবারও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে চলতি সংসদের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়ানোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করারও দাবি জানান।
এর আগে গত বছরের বাজেট আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো ইলেকশন চাই না। প্রধানমন্ত্রী আছেন, থাকবেন। আরও পাঁচ-দশ বছর দেশ চালাবেন।’
সরকারি দলের সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, যে পরিমাণ ভ্যাটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়, তার তিন গুণ বেশি আদায় হয়।
কোরাম সংকট
ঈদের ছুটি পর থেকে সংসদ অধিবেশন ভুগছে কোরাম সংকটে। ঈদের পর গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনই কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বৈঠক শুরু হয়নি। গতকাল মাগরিবের নামাজের বিরতির পরও বৈঠক শুরু হতে দেরি হয়। আর বৈঠক আগেভাগেই শেষ করা হয়। রাত পৌনে নয়টার দিকে বৈঠকের সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার বলেন, অনিবার্য কারণবশত বৈঠক ‘অ্যাডজর্ন’ করা হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গতকাল আরও দুজন সাংসদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার তালিকায় ছিলেন। কিন্তু কোরাম না থাকায় আগেভাগেই বৈঠক শেষ করা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো