সব বাধা-বিপত্তি, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে গাজীপুরের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোট আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। আপনারা সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে যান। ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।
তিনি দাবি করেন, গাজীপুরে ন্যুনতম অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে ধানের শীষের প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হবেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ফখরুল।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপার পরিবর্তনের আশঙ্কা করে ফখরুল বলেন, গাজীপুর সিটি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট। ২৬ জুনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। এ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে না পারলে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন দেখেই পরবর্তী তিন সিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়ুম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
ফখরুল বলেন, বিএনপি সাংবিধানিকভাবে একটি রাজনৈতিক দল, আমরা গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই, গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা থাকুক এটা চাই। নূন্যতম ভোটাধিকার যেন বজায় থাকে সেজন্য এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে তারা সম্পূর্ণ অযোগ্য। যারা একটি সিটি নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে না, তারা জাতীয় নির্বাচন কিভাবে পরিচালনা করবে। এরা প্রতিটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করছে। যেন ‘তোমরা যে যাই বলো কানে দিয়েছি তুলা’। কারণ সম্পূর্ণ দলীয় লোকজনদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার লক্ষ্য করেছি নির্বাচন কমিশন কারও কথা শুনতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেন তারা সেভাবে কাজ করেন। যার প্রমাণ দেখতে পেয়েছি খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে অন্যথায় সরানোর দাবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপারের আওয়ামী লীগের দলীয় দায়িত্ব পালনে সুনাম রয়েছে। তিনি সবার কাছে পরিচিত ও পুরোপুরি আওয়ামী লীগার। তার অতীত কর্মকাণ্ড সবার জানা আছে। আমরা আগেও এসপি হারুনকে এখন থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছে। এখনো বলছি, তাকে না সরালে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেনন, ‘সব কেন্দ্রের জন্য আমাদের এজেন্ট প্রস্তুত আছে। কিন্তু এখন তারা সেখানে থাকতে পারবেন কি না সেটি দেখার বিষয়। কারণ খুলনাতেও আমাদের প্রায় ৫০টির বেশি কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এবার গাজীপুরে কী করবে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশের জনগণ।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার নিজেদের দলের লোক দিয়ে নির্বাচন করছে না। মূলত পুলিশ র্যাব, ও ডিবির লোকজন সরকারের পক্ষে নির্বাচন প্রচার ও পরিচালনার কাজ করছে।
ফজলুল হক মিলন বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী নেতাদের গ্রেফতার করে অন্য জেলায় কয়েক মাস আগের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
সূত্র: যুগান্তর