অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নিজেকে সৎ প্রমাণ করতে গিয়ে জাতীয় সংসদের মতো পবিত্র স্থানে এক হাস্যকর, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার রাতে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েও সন্তানের পড়ার খরচ দিতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হলো- কাকে বলবো টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাবো বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা করবো। আমার কারণে তার পড়া হলো না। দুটো সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হলো। তারপর সে চাকরিতে ঢুকলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে বউ-মা অসুস্থ হলে দেখতে গেলাম। তখন তাকে অনুরোধ করলাম, কারণ আমার ভেতরে এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগতো যে, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও তার পড়ার খরচ দিতে পরিনি। তখন আমি বললাম তুমি হার্ভার্ডে আবেদন করো। আমি অনুরোধ করার পর সত্যি সে আবেদন করলো। চান্স পেয়ে গেলে। আমি কথা দিয়েছিলাম, ফাস্ট সেমিস্টারের টাকা আমি দেবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার আগে গ্রেফতার হয়ে গেলাম। তবে আমি চেয়েছিলাম, চান্স যখন পেয়েছে যেভাবে পারুক চালাক। পরে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে তা ভাড়া দিয়ে, সেই ভাড়ার টাকা দিয়ে, কলেজ থেকে দূরে বাসা নিলো সে (সজীব ওয়াজেদ জয়) যাতে সস্তায় বাসা পায়, গাড়ি রেখে মোটরসাইকেল চালিয়ে সে আসতো। রেহানার মেয়ে অক্সফোর্ডে চান্স পেয়েছে, সে পড়াশুনা করলো স্টুডেন্ট লোন নিয়ে, তারপর পড়াশুনা শেষে চাকরি করে লোন শোধ দিলো।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এনিয়ে কঠোর সমালোচনা ও হাস্যরস চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই তারা শুরু করে দুর্নীতি-লুটপাট। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যায়। বিশেষ করে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৯৯ সালে শেয়ারবাজারে বড় ধরণের অর্থ কেলেংকারির ঘটনা ঘটে। শেয়ারবাজার লুটের টাকার বড় একটি অংশ গিয়েছিল শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের পকেটে।
এছাড়া রাষ্ট্রের অন্যান্য সেক্টর থেকে ঘটেছে সীমাহীন লুটপাটের ঘটনা। কিন্তু ওই সময় রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি লুটে নেয়ার পরও এখন শেখ হাসিনা বলছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে তার ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য কেউ বিশ্বাস করছেন না।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতনরা বলছেন, শেখ হাসিনা অতি সাধু সাজতে গিয়ে চরম মিথ্যাচার করেছেন। টাকার অভাবে তার ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একথা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিশ্বাস করে না। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার ছেলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছেন। বিশেষ করে ২০১১ সালের শেয়ারবাজারের মহা কেলেংকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে শেখ হাসিনার ছেলে জয় সরাসরি জড়িত।
সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানের কাছে জয়ের টাকা পাচারের তথ্য থাকার কারণেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জয় একজন প্রতিষ্ঠিত টাকা পাচারকারী। মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে তাকে এবং নিজেকে সাধু বানানোর চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।