অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জোটের শরিক দলগুলো বিএনপি প্রার্থীর বদলে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ বিএনপি। জোটের বৈঠকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে জামায়াত ছাড়া বাকী ১৮ দলের সমর্থনের সিদ্ধান্ত হলেও তা মানছে না বেশ কয়েকটি দল। জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির স্থানীয় নেতারা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে লেবার পার্টির (একাংশ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ১৯ দল সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে- এমনটাই জোটের সিদ্ধান্ত। তবে বাস্তবতা হল, সিলেটে শুধু লেবার পার্টি নয় আরও বেশ কয়েকটি শরিক দলও জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এ নিয়ে লেবার পার্টির সিলেট জেলার এক নেতাকে শোকজও করা হয়েছে।
বিএনপির সিলেট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে ১৯ দল বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন করেছে এবং তার প্রচারে অংশ নিবে, এটা জোটের সিদ্ধান্ত। এখন সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি জোটের কোনো দল জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে, তা দুঃখজনক।
বৃহস্পতিবার সিলেটে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে জোটের শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুবের ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, বিজেপির (পার্থ) মহানগরের সদস্য সচিব নুরুল আম্বিয়া রিপন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহানগরের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, জাগপা মহানগরের সভাপতি শাহজাহান কবীর রিপন, এনডিপি জেলার সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান প্রমুখ।
১৪ জুলাই গুলশান কার্যালয়ে জোটের সর্বশেষ বৈঠকে সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে বেশ কয়েকটি শরিক দল প্রচার চালাচ্ছে- এমন অভিযোগ করেন শরিক দলেরই এক নেতা। এ নিয়ে ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের আচরণ জোটে ঐক্য থাকার ব্যাপারে বিঘ্ন ঘটাবে। ওই বৈঠকে শরিক দলের কয়েকজন নেতা বিএনপি নেতাদের জানান, স্থানীয়ভাবে দলের নেতারা জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। কেন্দ্র থেকে তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, জোটের সর্বশেষ বৈঠকের পর স্বাভাবিকভাবে আমরা ভেবেছিলাম সিলেটের বিষয়টি সমাধান হয়েছে। ১৭ জুলাই দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট সফরে গিয়ে ফের কেন্দ্রকে জানান, সেখানে জোটের বেশ কয়েকটি দল জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন।
সিলেটে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির স্থানীয় নেতারাও শুরুতে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। পরে দলটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ সিলেটে গিয়ে নেতাদেরকে বিএনপির পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানান। তবে এখনো অনেক নেতা জামায়াতের পক্ষেই প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির প্রার্থীর বদলে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়া শরিক দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, দেশের সবগুলো সিটিতেই আমরা বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর তুলনায় জামায়াতের প্রার্থীকে বেশি সৎ, দক্ষ ও ক্লীন ইমেজের মনে হয়েছে এবং জয়ের সম্ভাবনাও তার বেশি। তাই আমরা এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পক্ষে মাঠে নেমেছি। তারা বলেন, সিলেটে জামায়াতের শক্ত ঘাটি রয়েছে, সবাই মিলে চেষ্টা করলে অন্য দলের কিংবা দলনিরপেক্ষ ভোটারদের বড় একটি অংশের সমর্থন আদায় সম্ভব হবে। ভোটের দিন পর্যন্ত আমরা জুবায়ের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাবো।