ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০টি প্রস্তাব তৈরি করেছে বিএনপি। ঈদুল আজহার আগে-আগে এসব প্রস্তাব অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহী দলগুলোর কয়েকজন নেতার হাতে দেওয়া হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে এই ১০ প্রস্তাবের আকার আরও বাড়তে বা কমতেও পারে। একাধিক নির্ভরযোগ্যসূত্রে এ দশ দফার বিষয়ে জানা গেছে।
দশটি প্রস্তাবের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নিম্নে উল্লিখিত দাবিগুলোর ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।’
দাবিগুলো:
১. বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।
২. একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
৩. সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান।
৪. রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা।
৫. রাষ্ট্র ক্ষমতার গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য।
৬. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
৭. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করা।
৮. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা।
৯. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান।
১০. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা।’
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, এই ১০ প্রস্তাবের ভিত্তিতেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। ঈদুল আজহার আগে গত শনিবার (১১ আগস্ট) ও সোমবার (১৩ আগস্ট) দুই দিনের জরুরি বৈঠকের পর এই ১০ দফার চূড়ান্ত করে স্থায়ী কমিটি। এরপর এই প্রস্তাবের কপি ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছানো হয়। পরে ঐক্যে আগ্রহী বিকল্প ধারা, নাগরিক ঐক্য, জেএসডির কয়েকজন নেতাকেও দেওয়া হয় এই প্রস্তাব।
প্রস্তাবের বিষয়ে ঐক্যে আগ্রহী কোনও নেতা প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। নাগরিক ঐক্যের একটি সূত্র বলছে, প্রস্তাব সম্পর্কে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
প্রস্তাবের এক নম্বর দফা নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও প্রস্তাবের পর্যায়ক্রম নিয়ে প্রশ্ন আছে দলটির অনেকের। দলের শীর্ষপর্যায়ের একনেতার ভাষ্য, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত থাকার ব্যাপার নেই। তবে এক নম্বর হিসেবে গণতন্ত্র, নির্বাচন এসব প্রসঙ্গ থাকাই শ্রেয়।’
বিকল্প ধারার একজন দায়িত্বশীল নেতা মনে করছেন, এই প্রস্তাবের তালিকা বিকল্প ধারার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি। ভিন্ন পথে প্রস্তাবগুলো গোচর হলেও কোনও প্রস্তাব নিয়েই দ্বিমত নেই। তবে ঐক্যের লক্ষ্য কী হবে, তা নিয়ে কথা বলতে চাইছেন তারা।
বিএনপির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত দশ প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল সোমবার বা মঙ্গলবার যেকোনও সময় বৈঠকে বসবে গণফোরাম। দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তাদের প্রস্তাবের কথা শুনেছি। তালিকাটি দেখিনি। গণফোরামের দলীয় ফোরামে এটা নিয়ে আমাদের আলোচনা হবে। এরপরই আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করবো।’
উল্লিখিত ১০ দফা প্রস্তাবকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের প্রাথমিক পর্যায় বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির নেতারা ঐক্যের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে বলছেন, যে সব বিষয়গুলোকে তারা তালিকাভুক্ত করেছেন, আগ্রহী দলগুলোর চিন্তা-ভাবনাও কাছাকাছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের রাজনীতি, নির্বাচন, মানুষের ভোটের অধিকারসহ নানা বিষয়ে আমাদের এবং তাদের অনেক মিল আছে। কমন কিছু বিষয়ে, কিছু ইস্যু আমরা নির্ণয় করতে চাই। সেটার একটি এক্সারসাইজ এই প্রস্তাব, এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন