জাতীয় নির্বাচনের অব্যবহিত আগে দেশব্যাপী মামলা দায়েরের ধুম পড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তাদের দল ও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন হাজারের বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ নেতাকর্মীকে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই নতুন করে সাড়ে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে গতকালের যুগান্তরে এই মর্মে খবর ছাপা হয়েছে যে, রাজধানীর তিন থানায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশকিছু নেতাসহ ৩৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ মামলাগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন সব অভিযোগ আনা হয়েছে, বাস্তবে যেগুলো ঘটতে দেখা যায়নি। খবরটিতে আরও বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তি, ৮৬ বছরের প্যারালাইজড রোগী, এমনকি হজ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, নির্বাচনের অব্যবহিত আগে এত বিপুল সংখ্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অর্থ কী? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যেসব অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, সেগুলোর যথার্থতা রয়েছে কি? তৃতীয় প্রশ্ন, সরকার কি ভেবে দেখছে এভাবে গণহারে মামলা দায়ের করা হলে আখেরে তা তাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না?
আমরা মনে করি, উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর সরকারের জন্য সুখকর হবে না। এমনিতেই আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের সংশয় কাজ করছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, বিশেষত দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা-ও এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সরকারের উচিত নির্বাচনটিকে সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বলাবাহুল্য, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলবে। এটা ঠিক, কেউ কোনো অপরাধ করে থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
এ বিবেচনায় বিএনপির কোনো নেতা কিংবা কর্মী যদি নাশকতা অথবা অন্য কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকে, তাকে ছাড় দেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আনীত অভিযোগগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য?
সাধারণ মানুষ যদি মনে করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাগুলো দায়ের করেছে বা করছে, তা সরকারের ভাবমূর্তিই নষ্ট করবে এবং সেটা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে অবশ্যই। সরকারের উচিত হবে এ ধরনের আত্মঘাতী কার্যকলাপ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকরা, রাজনৈতিক দলগুলো তো বটেই। এমনকি জাতিসংঘসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোও বলছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা।
এমতাবস্থায় সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে মামলার পথ বেছে নিলে তা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে। আমরা মনে করি, অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে সরকারকে তার সদিচ্ছা প্রমাণ করতে হবে প্রথমে। কোনো পক্ষই যেন মনে না করে সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে জোর খাটিয়ে অথবা অন্য কোনো বেআইনি পন্থায় নির্বাচনে জিততে চাইছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে না এবং সরকার ও সরকারি দলের জন্য তা বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
সূত্র: যুগান্তর