ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি মিছিল করছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কোটা আন্দোলনকারীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সরকারের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে পাল্টা মিছিল বের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় দুটি মিছিল পাশাপাশি চলতে দেখা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শাহবাগে গেলে পিছু পিছু মিছিল নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। সেখান থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাশে এসে আন্দোলনকারীরা দাঁড়াতে চাইলে সেখানে আগে চলে এসে জায়গা দখল করে নেয় ছাত্রলীগের মিছিল। পরে সেখান থেকে গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা এলে পাশে এসে দাঁড়ায় ছাত্রলীগের মিছিল। পরে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যায় কোটা সংস্কারকারীদের মিছিল। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অপরাজেয় বাংলার পাশে এসে সমাবেশ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দুটি মিছিলকে পাশাপাশি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীরা বলেন, তাঁদের তিন দফা দাবি। সেগুলো হলো পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে ও তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে।
এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের স্লোগানে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকার বারবার দরকার।’ এ সময় তাঁরা নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশকে স্বাগত জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের সামনে থেকে কোটা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। তাঁরা বলেন, পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আজ ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ দফার ভিত্তিতে আমরা ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু আমাদের ওপর বড় বড় ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। শহীদ মিনারে আমাদের ওপর হামলা করে স্বাধীনতাকে অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এখন তিন দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি পালন করছি। সরকার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শেষে অপরাজেয় বাংলার পাশে সমাবেশ করেন। সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই। কোটা সংস্কারের সুপারিশে যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে, তেমনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।’ এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন বাতিল করার কথা বলেন হাসান আল মামুন।
কোটা আন্দোলনকারীরা বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেটির বিচার হয়নি। তার বিচার দাবি করেন তাঁরা।
এদিকে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন জানান, সেটি তাঁরা পরে জানাবেন।
নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ-সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়েও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, এটা আদালতের রায়কে স্পর্শ করবে না, কোনো সমস্যা হবে না। মানে কোনো কোটাই থাকবে না।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। দেখেই বলেছি, এখন কোটা না থাকলেও চলতে পারবে।’
নিচের পদের কোটার বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, নিচেরগুলো আগে যা ছিল তা-ই, এগুলো তাদের কর্মপরিধিতেও ছিল না।
পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়তো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ হবে। মন্ত্রিসভা পাস করলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
৪০তম বিসিএসে নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে কি না, জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, এতে (বিজ্ঞপ্তি) বলা আছে, সরকার যদি ভিন্নরূপ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী কোটা থাকবে।
বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান এই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিতে সদস্য ছিলেন ছয়জন সচিব।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের ব্যাপকতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মধ্যেই গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিল হবে বলে জানান। এরপর কোটা সংস্কার, বাতিল বা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল একটি মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান এজাহারভুক্ত আসামি। বাকি চার মামলার কয়েক শ আসামির সবাই অজ্ঞাতনামা। মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দুটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের বিশেষ শাখার এক সদস্যের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের মামলা রয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো