অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আটকের পর দীর্ঘ ১৫ দিন গুম রাখার পর শিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শফিউল আলমসহ ৫ তরুণকে অবশেষে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। তাদেরকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে মিথ্যা বিষ্ফোরক মামলাও দায়ের করে পুলিশ। পাশাপাশি আদালত কর্তৃক তাদের ৩ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে শিবির নেতা শফিউলসহ ৫ তরুণের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিষ্ফোরক মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। মামলায় শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইনকেও জড়ানো হয়েছে। পুলিশের এহেন কান্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিবিরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে নেতাকর্মীরা। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেছেন, নির্বাচন চলে আসায় সরকার পাগল হয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসন দলীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দল ও মতকে দমনের অপচেষ্টা আগের চেয়ে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিবির নেতাকর্মীরা বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের নামে গণহারে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার দেখে মনে হচ্ছে সরকার ছাত্রশিবিরকে তাদের প্রধান বিরোধীদল মনে করছে। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে। এজন্য স্বৈরাচারি কায়দায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমন নিপীড়ণের স্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডেই এখন তারা সক্রিয় নয়। এরপরও সরকারের আতঙ্ক কাটছে না।
এদিকে শফিউলসহ ৫ তরুণকে ১৫ দিন ধরে গুম রাখার পর আদালতে তোলায় যেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা সেখানে আদালত উল্টো তরুণদের বিরুদ্ধেই রিমান্ড মঞ্জুর করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তরুণদের স্বজনরা। তারা বলেছেন, কাউকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আদালতে তোলার বিধান থাকলেও আইন ও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুলিশ তরুণদেরকে ১৫ দিন ধরে গুম রাখে এবং গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। এটা সুস্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘণ হলেও আদালত পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা দুঃখজনক।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে বিমানবন্দর এলাকায় হজফেরত মাকে আনতে গিয়ে মায়ের সামনে থেকেই শফিউল ও তার এক ভাইকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের সূত্র ধরে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ এলাকার মেস থেকে আরও দু’জনকে তুলে নেয়া হয়। তুলে নেয়ার ৪ দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ তরুণের স্বজনরা তাদের নিখোঁজ সন্তানদের সন্ধানের দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সময় তারা জানান, এ ব্যাপারে বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ। এমনকি তাদের আটকের কথাও ডিবি বা কোনো থানা পুলিশ স্বীকার করেনি।
অবশেষে দীর্ঘ ১৫ দিন গুম রাখার পর পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ৫ তরুণকে মিথ্যা বিষ্ফোরক মামলা দিয়ে আদালতে তোলে এবং দাবি করে তাদেরকে আগেরদিন বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এমন মিথ্যাচারে হতবাক হয় পরিবারের স্বজনরা। এছাড়া মামলায় শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারিকেও জড়ানোয় ক্ষুব্ধ হয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরাও।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সালাহউদ্দীন আইয়ুবী এ সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিবিরের মত একটি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকার যেভাবে মামলা হামলা আর গ্রেফতার নির্যাতন শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে দেশের প্রধান বিরোধী দল হচ্ছে শিবির। নির্বাচনের সন্নিকটে এসে ক্ষমতা হারানোর ভয় তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এজন্য স্বৈরাচারি কায়দায় বিরোধী মতকে দমন পীড়ণের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এসেবের পরিণতি কখনো শুভ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পূর্বেও ছাত্রশিবিরকে দমনের উদ্দেশ্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এরকম অসংখ্য মামলা দায়ের করে সরকার। একসময় তাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তখন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তারা। তাদের আন্দোলন দমাতে গিয়ে সরকারকে ব্যাপক মাত্রায় হিমশিম খেতে হয়। পরবর্তীতে দুই বছর ধরে সেই আন্দোলন চলমান থাকে।
এখনকার প্রেক্ষাপট ২০১৩ সালের প্রেক্ষাপটের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। বর্তমানে দেশে এবং বিদেশে সরকার অনেকটাই চাপের মধ্যে রয়েছে। ৫ জানুয়ারির মত নির্বাচন করার মত পরিস্থিতি এখন আর নেই। আন্তর্জাতিক মহলও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। দেশেও জাতীয় ঐক্যের নামে বিরোধী দলগুলো একজোট হচ্ছে। সবমিলে ২০১৩ সালের আন্দোলনের পর সরকার কোনোভাবে টিকে গেলেও তখনকার মত আন্দোলন এবার হলে সরকার বেকায়দায় পড়বে বলেই মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।