আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। এছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী ও কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন আদালত।
১৪ বছর আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলা হয়। অবশেষে বুধবার দুপুর ১২টায় তার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বেলা ১২টায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা আলোচিত দুই মামলার রায় ঘোষণা করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
এ রায় ঘিরে সকাল থেকেই নাজিমউদ্দিন রোড ও আশপাশের এলাকায় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে আছেন।
দুই মামলার ৪৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা ৩১ আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় সকালেই। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচারকাজ চলে।
এ ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়। মামলাগুলো একসঙ্গে তদন্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়। ভয়াবহ সেই ঘটনার ১৪ বছর এক মাস ২০ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
৫২ আসামির মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামি ৪৯ জন।
আসামিপক্ষে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সাবেক দুই আইজিপি- মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হকের আইনজীবী এম নজরুল ইসলাম বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে আসামি করা হয়েছে।
কিন্তু মুফতি হান্নানের সেই জবানবন্দি সঠিক মর্মে প্রমাণ হয়নি। এ দুজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। প্রথম দফায় দাখিল করা চার্জশিটে ওই তিনজন আসামি ছিলেন না। সম্পূরক চার্জশিটে ওই তিনজনকেই আসামি করা হয়েছে। নির্দোষ দাবি করে আসামিরা বেকসুর খালাস পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশসহ (হুজি) তিনটি জঙ্গি সংগঠন ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। হামলায় আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। আর অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ মামলায় সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৪৯২ সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আর আসামিপক্ষে ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলায় ১৪৪ আলামত ও ৫৫টি বস্তু প্রদর্শন করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। আর গত বছরের ১২ জুন মামলায় ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আনসার-ভিডিপির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিনসহ ১৮ আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।
পলাতক আসামিদের মধ্যে ১৪ জনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়।