অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রথমে স্বাগত জানালেও এখন তারা এই ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিদিনই ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনসহ অন্যদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নাসিম, তোফায়েল, হানিফ, হাছান মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কামরুল ইসলাম প্রতিদিনই বলছেন যে জনবিচ্ছিন্ন দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠন করা হয়েছে। কারো হাটু ভাঙা, কারো কোমর ভাঙা বলে মন্তব্য করছেন। ওরা দলছুট, ওরা গণতন্ত্রের শত্রু, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। তাই এদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতো তাদের খুনী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুচরা ও আধুলি দল বলে মন্তব্য করছেন।
এদিকে, নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশের মাধ্যমে তাদের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেটে শাহজালালের মাজার জিয়ারতের পর সেখানে একটি সমাবেশের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু, প্রশাসন তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। আর বুধবার আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দলছুট, জনবিচ্ছিন্ন, খুচরা ও আধুলি দল নিয়েই যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে বাধা কোথায়? যেহেতু তাদের সঙ্গে জনগণ নেই, সেহেতু তাদের সমাবেশেতো লোকজন আসবে না। আওয়ামী লীগের ভাষায়-সারাদেশে তাদের কোনো ভোটার নেই। তাহলে ভোটারবিহীন এই জোটকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না কেন?
এছাড়া গত সপ্তাহে ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না যমুনা টিভির টকশোতে ঐক্যফ্রন্টের জনপ্রিয়তা যাছাই করতে আওয়ামী লীগকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছেন। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ এই ঐক্যফ্রন্টের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মতো সৎ সাহস কি ওবায়দুল কাদেরদের আছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে প্রকাশ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জনবিচ্ছিন্ন ও কোমর ভাঙা বলে গালি দিলেও ভেতরে ভেতরে তারা খুবই অস্বস্তিতে আছেন। নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন দেখে সরকারের নীতিনির্ধারকসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
সরকার মনে করছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি দিলে তাদের জনসভায় জনতার ঢল নামতে পারে। আর ঐক্যফ্রন্টের জনসভার মানুষের ঢল যদি বিদেশিদের চোখে পড়ে তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তখন বিদেশিরাও মনে করবে যে সরকার আসলেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তখন সরকারের প্রতি আর বিদেশিদের সমর্থন থাকবে না। এমন আশঙ্কা থেকেই মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি না দিলে সেটা সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনও হতে পারে সরকারের বাধা উপেক্ষা করেই ঐক্যফ্রন্টের ডাকে জনগণ মাঠে নেমে যাবে। তখন এ পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।