অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন বন্টন নিয়ে মহাসঙ্কটে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জটিলতায় যেন জোটের ভেতর চলছে ক্ষোভ ও মান-অভিমান। এমন কী এ ক্ষোভ প্রকাশ্য বিদ্রোহে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে দলের ভেতর বিদ্রোহ আর জাতীয় পার্টি-যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে বেশি বিপদে আছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী জোটে নতুন করে যুক্তফ্রন্ট ও বেশকিছু ইসলামিক দল যোগ হওয়ায় আসন বন্টনের জট বেড়েছে। আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন মহাজোটের শরিকরা। আবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভিড় করছেন গণভবনে।
কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেলেও ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সাথে সাক্ষাত করতে নারাজ তিনি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে দলের সংখ্যা ১২টি এর মধ্যে চারটির নিবন্ধনই নেই। এ ৪টি দল হল- কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগ। নৌকার প্রতীক চেয়ে আবেদন করা এসব দলের কোনো নেতাকে এবার মনোনয়ন দেয়া হবেনা বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ ওয়ার্কার্স পার্টিকে মাত্র ৫টি আসন দিতে চাইছে, সেগুলো হল সমাজক্যল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে (ঢাকা-৮), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে (রাজশাহী-২), মোস্তফা লুৎফুল্লাহকে (সাতক্ষীরা-১), ইয়াসিন আলীকে (ঠাকুরগাঁও-৩) ও টিপু সুলতানকে (বরিশাল-৩)।
এ পাঁচ জনসহ ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমানে ৬ জন এমপি রয়েছেন। আরেকজন নড়াইল-২ আসনে হাফিজুর রহমান। এ আসনে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টি এ আসনের পরিবর্তে অন্য আসন চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মত বিরোধ এখনও চলছে ।
আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা ৬০টি আসন, কিন্তু এখনো ৩০টি আসনেই অনড় আওয়ামী লীগ। এনিয়ে দর কষাকষির যেন শেষই হচ্ছে না।
মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান এমপি। মহাজোটের কারণে এ আসনটি বিএনএফকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
১৪ দলের আরেক শরিক জাসদের (ইনু) বিষয়টিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জাসদ ভেঙে যাওয়ার পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদে এমপি আছেন তিনজন।
দুই বছর আগে জাসদ ভেঙে যে দুই অংশ হয়ে যায়, তার অপর অংশের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। গত নির্বাচনে জাসদের যে ৫ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তার দুজন মঈনুদ্দিন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধান বাংলাদেশ জাসদে রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় বাংলাদেশ জাসদ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবে বলে দলটির সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া জানান।
বাংলাদেশ জাসদ সর্বশেষ তিনটির দাবি জানিয়েছে। এ তিনটি হল- মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮), শরিফ নুরুল আম্বিয়া (নড়াইল-১) ও নাজমুল হক প্রধান (পঞ্চগড়-১)। তবে জাসদকে কয়টি আসন দেয়া হচ্ছে সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি।
১৪-দলীয় জোটের পাঁচ শরিক দলের গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় গণআজাদী লীগ, বাসদ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে কেউ মনোনয়ন পাবে না। তাই তারাও যেন অন্য পথে হাঁটা শুরু করেছে। এ যেন এক উভয় সঙ্কটের আশঙ্কা।
উল্লেখ্য শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবন ঘিরে উপচে পড়া। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তার সরকারি বাসভবনে ভিড় করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা আসা মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। এমনকি মনোনয়নের দাবিতে গণভবনের সামরেন মানববন্ধনের ঘটনাও ঘটেছে।