তামিম হিশামী
অনাকাঙ্ক্ষিত উত্থান রোধের বা প্রতিরোধের চেষ্টা করাটা সকলের কাছে যৌক্তিক হিসেবেই বিবেচিত। তবে তা হতে হবে বৈধ পন্থায়। তবে উত্থানটা যৌক্তিক হলে সহযোগিতা করাটাও নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই বর্তায়। কিন্তু এর বিপরীতে যা ঘটানো হবে তা হবে নীতিহীন ও অপরাধের আওতাভূক্ত। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন অ্যাবর্শন নীতিতে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। এই কার্যক্রমের কলকাঠি নাড়ছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দিন নিজেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে অ্যার্বশন নীতির ছক আকছেন কেএম নূরুল হুদা ও সচিব হেলালুদ্দিন। তফসিল ঘোষনার পর মনোনয়ন জমাদানের কার্যক্রমের মাঝেই তাদের এই চরিত্র ফুটে উঠেছে। গতকাল ২৮ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনিত প্রার্থীদের ফরম জমাদানের শেষ সময় ছিলো বিকাল ৫টা পর্যন্ত। সারাদেশে বিভিন্ন দলীয় ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা তাদের ফরম জমাদান করেন। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট এই সংস্থাটির অ্যার্বশননীতির প্রথম দফার চরিত্র ফুটে উঠেছে রংপুর-৫ আসনে প্রতিদ্ব›দ্বীতার জন্য মনোনয়ন প্রাপ্ত গোলাম রব্বানীর ফরম জমাদান করতে গিয়ে। ওপরের চাপ থাকার অজুহাত দেখিয়ে তার মনোনয়ন ফরম জমা নেয়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব। গোলাম রব্বানীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে যাওয়া আইনজীবি এ্যাডভোকেট বায়োজিদ ওসমানী অভিযোগ করে বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার আগে তিনি মনোনয়ন ফরমটি পুলিশের বি-সার্কেল, মেট্রোপলিটন ডিবি, এসবির কর্মকর্তারা দেখার পর জমাদানে সমস্যা না থাকায় মনোনয়ন ফরম জমাদানের কথা বলেন। এরপর তারা মনোনয়ন ফরম জমাদান করতে গেলেও রিটার্নিং কর্মকর্তারা তা গ্রহন করেনি। প্রায় পাঁচ ঘন্টা ডিসির দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেও ফরম জমাদানে তারা ব্যর্থ হন।
এখানে প্রশ্ন হলো ওপরের চাপ বলতে রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তারা কাদেরকে বুঝিয়েছেন? যেহেতু নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রানধীন সেহেতু সকল রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্যের দায় নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব বাধ্য। এমতাবস্থায় প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে অবৈধ্যভাবে নিবৃত্ত করাটাও তো সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই অ্যাবর্শন ঘটানো বলা যেতে পারে। যেমনি অনৈতিকভাবে অ্যাবর্শনের মাধ্যমে একটি উজ্জল সম্ভাবনাময় প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়া হয়? তেমনি নির্বাচনে সরকার বিরোধী প্রার্থীকে অংশগ্রহণ করার পথ রুদ্ধ করাটা কি অনৈতিক নয়? তবে জনমনে আশংঙ্কা এখন আরো বেশি দানা বেধেছে যে, বিরোধীদের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বাচাই করতে গিয়ে কতগুলো আবার অ্যাবর্শন করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারের আজ্ঞাবহ বিতর্কিত কর্মকর্তারা!
নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যখন ইসি সকলের জন্য সমান সুযোগ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তখন তাদের অতীত ও ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দানা বাধছে।
সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দিনের অতীত কর্মকান্ড নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন অনেকে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালে হেলালুদ্দিন রাজশাহীতে বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালে তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে জামায়াত -শিবির এবং বিএনপির অনেক নেতাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও খুন-গুম করেছেন। যা এখন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কয়েকদিন আগে সারাদেশের নির্বাচনকে ইঞ্জিনিয়ারিং করার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের একটি হলরুমে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সিইসি কেএম নুরুল হুদাও বলেছিলেন তাদের নির্দেশের বাইরে কেউ কিছু করছে না, সেক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা না নেয়ার বিষয়ে রংপুরের ডিসি তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা যে বলেছেন ওপরের নির্দেশে তারা মনোনয়ন জমা নেননি এর দায় তো সিইসি বা ইসি সচিবের উপরেই বর্তায়।
এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোট প্রার্থীদের গুম-খুন অব্যাহত থাকলে কিভাবে এই নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে জনমনে শংঙ্কা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সহ সকল কর্মকর্তাদের কাছে এদেশের সকল মানুষ একপেশে আচরন পরিহার করে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ প্রত্যাশা করে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কোন সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে হত্যা বা জিম্মি নয়, বিকশিত হওয়ার সুযোগ চায় এদেশের জনগণ। তাই নেতৃত্ব ভূমিষ্ট হতে দিতে হবে, কোন প্রকার অ্যাবর্শনে যোগসাজশ বা সহযোগিতা নয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও স্টাফ রিপোর্টার