অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একজন মানুষকে সাধারন জনগন কতটা ভালোবাসতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত হতে পারেন অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম-১৬ আসনে (বাঁশখালী) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি বাঁশখালী উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। জনগন সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছিল। নির্বাচিত হয়ে তিনি যেভাবে জনগনের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, যেভাবে জনকল্যানে নিজেকে নিবেদিত করেছেন, এরকম চিত্র বাঁশখালীর মানুষ আগে কখনো দেখেনি।
অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম বর্তমান আওয়ামী দু:শাসনের একজন মজলুম ভিকটিম। জেল জুলুম জরিমানা মোকাবেলা করেই তিনি এখনো ময়দানে টিকে আছেন। বাঁশখালীর আলেম ওলামা সম্প্রদায়ের নয়নের মনি ইসহাক হুজুরের সাহেবজাদা হিসেবে তিনি আরামে জৌলুসে জীবন কাটাতে পারতেন। অহংকারী একটি জীবন নিয়ে নিরাপদে সটকে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।
সাধারন মানুষের ভাষায় তিনি একজন মাটির মানুষ। নিরহংকারী, পরোপকারী। সুখে দুখে তিনি মানুষের পাশে ছুটে যান। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করেন। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর যেভাবে উন্নয়ন করেছেন, যেভাবে বাঁশখালীর মানুষের জন্য পরিশ্রম করেছেন, সেটা দেখেই স্থানীয় জনগন তাকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য চাপ দেয়। তার দল জামায়াতে ইসলামীও জোটের সাথে দর কষাকষিতে এই বাঁশখালীকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন আসন হিসেবে উল্লেখ করে।
কিন্তু কেন্দ্র জনগনের সেই পালস বুঝতে পারেনি। তারা নতুন বোতলে পুরনো মদের মত সেই একই নেতাকে আবারো মনোনয়ন দেয়। কিন্তু সেই নেতা বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের দু:শাসনে নিখোঁজ ছিলেন। বিগত জোট সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রী হয়ে সুবিধা নিলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই তিনি গায়েব হয়ে যান। এলাকার মানুষ তাকে আর খুঁজে পায়নি। নির্যাতিত কোন মজলুমের পক্ষেও তিনি দাঁড়াননি। এমনকি জোটের প্রোগ্রামে বা টিভির টকশোতেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তাই জনগন এই ১০ বছরে পুরোপুরি নির্ভর হয়ে পড়ে অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের উপর। এলাকাবাসীকে খেদমত করার এই সুযোগ পেয়ে শাহজাদা জহিরুল ইসলামও নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। জনগনও তার সেবায় অভিভুত হয়ে পড়ে। তাই এবার যখন মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি সামনে এলো, স্বাভাবিকভাবেই জনগন আশা করেছিলেন যে কেন্দ্রের হাইকমান্ড স্থানীয় জনগনের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামকেই জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করবেন।
কিন্তু বিধি বাম। আবারও সেই বর্নচোরা সুবিধাবাদী মানসিকতার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকেই বিএনপি বেছে নিলো। এরই মধ্যে অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দিয়েছেন। জনগন কোনভাবেই চায়নি যে তিনি বসে যান। জনগনের আকাঙ্খা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেন তিনি।
এখনো পর্যন্ত বাঁশখালীর আকাশে বাতাসে শুধু জহিরুল ইসলামের নামই ভেসে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি প্রথম আলোতে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে বিএনপি নেতা জাফরুলও নাকি আওয়ামী লীগ নয়, বরং জহিরুলকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন তাই নিয়ে টেনশনে আছেন।
নির্বাচনী প্রচারনা শুরু হওয়ার পর যখন জহিরুল ইসলাম তার নির্বাচনী প্রতীক আপেলের পক্ষে পোস্টারিং শুরু করলেন, তখনই ফেসবুকের কল্যানে একটি ছবি সারা পৃথিবীর বাংলাভাষাভাষী মানুষের সামনে এলো। ছবিটিতে দেখা যায়, একজন হিন্দু নারী ইসহাক হুজুরের ছেলে আর তার প্রতীক আপেলকে পোস্টারেই আদর মাখা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্যটা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
জামায়াতের প্রার্থী, ইসহাক হুজুরের ছেলে হিসেবে মুসলমানরা অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের প্রতি একটু বেশী দরদী থাকবে- সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু জহির মওলানার প্রতি হিন্দু এই নারীর ভালোবাসাটি সবাইকে বিস্মিত করেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে যে ব্যক্তি জহিরুল ইসলাম দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ বাঁশখালীর মানুষের কাছে কতটা জনপ্রিয়। অধ্যক্ষ জহিরের সমর্থনে এই পর্যন্ত যে কয়টা মিছিল হয়েছে তা স্মরনাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ। এমনকি সাধারনভাবে গ্রাম দিয়ে অধ্যক্ষ জহির হেটে গেলেও সেটাও একটা জনস্রোতে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।
তাই সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে ৩০ তারিখের নির্বাচনেও জনগনের এই ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটবে এবং অধ্যক্ষ জহির সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক নিয়ে বড় দুই দলের প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানেই পরাজিত করতে যাচ্ছেন।