অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দিন যত যাচ্ছে একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ধোঁয়াশা ততই বাড়ছে। ভোটের ব্যবধানের মাত্রা অধিক হওয়ায় এনিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
নির্বাচনের একদিন আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন তার দল কখনো ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসেনি। অথচ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে শেখ হাসিনার সংসদীয় আসনসহ গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই ভোট ডাকাতি হয়েছে। অতীতের নির্বাচনগুলোর সঙ্গে এই নির্বাচনের ফলাফলে ভোটের ব্যবধানে মারাত্মক গরমিল।
দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ-১ আসনে মহাজোট প্রার্থী ফারুক খান পেয়েছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ১৬১ ভোট। আর বিএনপির এফ ই শরফুজ্জামান পেয়েছেন মাত্র ৫৭ ভোট। এর আগে সর্বশেষ সব দলের অংশগ্রহণে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির সেলিমুজ্জামান মোল্লা পেয়েছিলেন ৯৯৮৬ ভোট।
এরপর গোপালগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলুল করিম সেলিম পেয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট। বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ পেয়েছেন ২৮৬ ভোট। এই আসনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৭৬৮০ ভোট।
এরপর, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪১৬ ভোট। বিএনপি প্রার্থী এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৯ ভোট। এই আসেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির জিলানী পেয়েছিলেন ৪৪৫১ ভোট।
এছাড়া ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই বিএনপি জোটের ভোটের পরিমাণ আরও বেশি ছিল।
এখানে যদি ৯ম সংসদ নির্বাচনের ভোটও হিসাব করি তাহলে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপি জোটের মোট ভোট হচ্ছে ২২০৯৭। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিন আসনের মোট ভোট হচ্ছে মাত্র ৪৬২। আগের চেয়ে এবার বিএনপিজোট ২১৬৩৫ ভোট কম পেয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে-বিএনপি-জামায়াতের এই ভোটগুলো গেল কই?
গোপালগঞ্জের বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছে। নির্বাচনের প্রচারতো অনেক দূরের কথা, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে তারা প্রয়োজনীয় কাজেও রাস্তায় চলাচল করতে পারেনি। তিনটি আসনে বিএনপি-জামায়াতের কমপক্ষে ৪০ হাজার ভোটার আছে বলেও জানান তারা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিজোটের মোট ছিল প্রায় ৪০ হাজার।
এরপর ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে তারা এজেন্ট দিতে পারেনি। গ্রেফতারের ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে রাজি হয়নি। আর নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছে যে, ভোট কেন্দ্রে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসতে পারবে না।