অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথম স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়। দুদককে স্বাধীনতা দেয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সংস্থাটি যাতে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারে। সকল প্রকার চাপের উর্ধ্বে উঠে যাতে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত রাখাই ছিল স্বাধীন কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু, কালের পরিক্রমায় কাগজে কলমে দুদক নামের প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের অর্থাৎ সরকার প্রধানের অনুমতি ছাড়া দুদক কারো বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারে না। মূলত বর্তমানে এটা একটা সরকারের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরো সহজে বলা যায়-দুদক এখন কাগুজে বাঘ। আর দুদকের শক্তি শুধু একটি জায়গাতেই সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। সেটা হলো বিরোধীদলের নেতাদের ক্ষেত্রে। বলা যায়-দুদক এখন বিরোধীদল দমনে সরকারের প্রধান হাতিয়ার।
দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসার পরই দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে কোনঠাসা করতে সরকার দুদককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগের নেতারা লুটপাট করে ব্যাংক, শেয়ারবাজার, বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে শত লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কিন্তু কথিত স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন আজ পর্যন্ত এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সাহস দেখাতে পারেনি। কিন্তু কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুদকের মামলায় ঠিকই জেলে ঢুকিয়েছে সরকার।
কিন্তু, মঙ্গলবার হঠাৎ করেই দুদক চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলেন যে সরকারের বিদায়ী মন্ত্রীদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করা হবে। দুদক চেয়ারম্যানের এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে কানাঘুষা। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, শেখ হাসিনা কি তাহলে তার বিগত সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চালাবেন? মন্ত্রীদের অনেক বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের লোকজনও জড়িত আছে। নাসিম, মায়া, শাজাহান খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, খন্দকার মোশাররফ, কামরুল ইসলাম, মেনন, ইনু, শাহজাহান কামাল, তারানা হালিম, মতিয়া চৌধুরী ও আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ বিদায়ী সকলের মন্ত্রণালয়ই ছিল ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের দুর্নীতি প্রকাশ হওয়া মানেই শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। এরপরও দুদক চেয়ারম্যানের এ ঘোষণার পেছনে মূল উদ্দেশ্য কি?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদায়ী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান দুদক চেয়ারম্যানের মূল উদ্দেশ্য নয়। নতুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশেই দুদক চেয়ারম্যান এই ঘোষণা দিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুদক চেয়ারম্যান এই ঘোষণা দিয়েছেন। আর এটার মূল উদ্দেশ্য হলো তাদেরকে চাপের মুখে রাখা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভা থেকে পুরনো যারা বাদ পড়েছেন তারা শেখ হাসিনার ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। সরাসরি কিছু না বললেও আকারে ইঙ্গিতে অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
শেখ হাসিনার কাছে তথ্য আছে, বঞ্ছিতরা দলের ভেতর গ্রুপ সৃষ্টিরও চেষ্টা করছেন। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যও কাজ করতে পারেন এমন আশঙ্কাও করছেন শেখ হাসিনা। এজন্য তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখার জন্য মূলত দুদককে দিয়ে তিনি বিদায়ী মন্ত্রীদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের ঘোষণা দিয়েছেন। যাতে এনিয়ে তারা আর নড়াচড়া না করে।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, দুদকের এই ঘোষণার পর বিদায়ী মন্ত্রীদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর স্মরণাপন্ন হওয়ার চেষ্টা করছেন। যাতে এরকম কিছু না হয়।