অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভয় আর আতংকই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংকট; এমন অভিমত দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস। গুতেরেস জানিয়েছে, জাতিসংঘকে এমন একটি প্লাটফর্মে তিনি পরিনত করতে চান যা ভঙ্গুর এই পৃথিবীর ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কগুলোকে আবার জোড়া লাগাতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল বিক্রিত পন্য হলো ভয়। আপনি ভয় দেখিয়েই বিভিন্ন জরিপ ও রেটিংয়ে ভালো স্কোর লাভ করেন, ভয় দেখিয়েই নির্বাচনে ভোট নেন আবার বিজয়ীও হন। ভয় দিয়েই সবাই বিশেষ করে সরকারগুলো নিজেদের মত করে সবকিছুকে আদায় করে নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস এসব কথা বলেন। একই সংবাদ সম্মেলনে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়নি। তিনি আরো বলেন, যে যত কথাই বলুক, নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি খোলামেলা সংলাপ বা আলোচনার কোন বিকল্প নেই। এটা করা সম্ভব না হলে দেশটি সংকটে পড়ে যেতে পারে।
গুতেরেস বলেন, সরকারগুলো এখন জনগণকে ভয় দেখায়। এতে সংকট বাড়ছে। সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে উল্টো কৌশল নিতে হবে। তাদেরকে দেখাতে হবে যে তারা আসলেই জনগণের ভাল করতে চায়। মানুষ যেসব কারনে ভয় পাচ্ছে সেগুলোকে কাটানোর জন্য সরকারকে জনগণের সাথে কথা বলতে হবে, জনগণের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে। আর সরকারের যেসব কৌশল আমজনতার মনে ভয়ের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছে সেগুলো থেকে সরকারকেও আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যকার আভ্যন্তরীন বিভেদ ও বিভাজন বাড়ছে আবার বিভিন্ন দেশ ও দেশগুলোর সরকারগুলোর মধ্যেও দুরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায়শই আমরা রাজনীতি ও কুটনীতিতে এমন কিছু উত্তেজন উপাদানের প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি যা সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলছে। প্রতিপক্ষকে নোংরা ও ঘৃনাপূর্ণ গালি দেয়া হচ্ছে। সাধারন রাজনৈতিক বিতর্কগুলোতেও বিষাক্ত উপাদানগুলো ক্রমশই প্রবেশ করে যাচ্ছে। এই সব বাস্তবতা আমাদেরকে ১৯৩০ সালের সহিংস প্রেক্ষপট এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি স্মরন করিয়ে দেয়।
প্রতিপক্ষকে গালি দিয়ে আর ঘৃন্য অপরাধ করে তাদেরকে দমিয়ে রাখলে মানবাধিকার বিনষ্ট হয়, উন্নয়ন ব্যহত হয়, শান্তি ও নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। তাই শুধু যুদ্ধ থামাতে জাতিসংঘ যে কাজগুলো করছে, বর্তমানে তা আর যথেষ্ট নয়। বরং ঘৃনা ও বিদ্বেষপূর্ন বক্তব্য রহিত করার জন্যেও তিনি জাতিসংঘের নতুন কর্মকৌশল প্রনয়নের কথা জানান।