অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি জানিয়েছিল বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। কিন্তু সরকার ঐক্যফ্রন্টের একটি দাবিও মানেনি। দাবি আদায়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কথা বলা হলেও ড. কামালের পরামর্শে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যায় বিএনপি। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে।
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও ভোটের দিন দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সাধারণ মানুষতো দূরের কথা নৌকার অনেক সমর্থকই ভোট দিতে পারেনি। ফজরের আগেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আর দিনেতো ভোটাররা ভোট কেন্দ্রের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। দুপুরের দিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা সবাই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। বিএনপিরও ৭০ জনের মতো প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগের সীমাহীন ভোট ডাকাতিতে ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকে সারাদেশ। আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের শুধু ঘৃনাই আসেনি, তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও হয়ে উঠে।
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা এলো। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে লাগাতর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবে। কিন্তু তারা কোনো কর্মসূচি না দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ড. কামাল। আর সঙ্গে কিছু গরম গরম কথা বললেন।
নির্বাচনের পরের দিন থেকে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও বিশিষ্টজনদের প্রতিবাদ আসতে শুরু করলো। ভোট ডাকাতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও। কিন্তু চেতনা ফিরে আসেনি ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। চুপ হয়ে গেলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকী। এত বড় ভোট ডাকাতির পরও কোনো কর্মসূচি না দিয়ে ড. কামালরা কেন চুপ হয়ে গেলেন? এনিয়ে এখন চলছে আলোচনা সমালোচনা। ড. কামাল, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকীর ভুমিকা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
আর সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-এমন নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির নির্বাচনের পরও বিএনপির মতো এমন বড় একটি দল কী কারণে চুপ হয়ে গেল? সারাদেশের কোটি কোটি নেতাকর্মী যখন ক্ষোভে ফুসছে, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা নীরব ভুমিকা পালন করছেন কেন? তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বাদ দিয়ে ড. কামালের পরামর্শে চলছেন কেন?
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা ড. কামালের ফাঁদে পা দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের এক সরকারি ছায়ায় বিএনপি আটকা পড়েছে। ড. কামাল আসলে শেখ হাসিনার পতন চান না। কারণ, সংলাপ করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয়নি। আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবিই আদায় করা সম্ভব না। বিএনপি যদি তাদের দলীয় প্রধানের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চায় তাহলে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে এসে রাজপথের আন্দোলনের নামতে হবে। অন্যথায় এরশাদের জাতীয় পার্টির মতো একদিন নি:শ্বেস হয়ে যাবে দলটি।