অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠই নয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামেও পরিচিত। এখান থেকে শুধু জ্ঞান বিতরণই করা হয় না, জাতির ভবিষ্যত নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের লেখাপড়া করার অধিকার আছে, ঠিক তেমনি প্রত্যেক ধর্ম ও আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদেরও তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। নিজস্ব মত প্রকাশ করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। রাষ্ট্রের সংবিধান লংঘন করে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের মতো করে কোনো নিয়মনীতি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না।
কিন্তু, পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে কর্তৃপক্ষ ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের ওপর সংগঠন করা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ এখানে অলিখিতভাবে ধর্মভিত্তিক সংগঠন করা নিষিদ্ধ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে লিখিতভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এটাকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবিও তুলেছে তারা। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো সব সময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য মিটিং মিছিল করে আসছে। কোনো ধর্মভিত্তিক সংগঠন যাতে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেটার দাবিও জানাচ্ছে তারা।
তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো- ধর্মবিদ্বেষী ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈঠকে দাবি তোলা হয়েছে কোনো ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই দেশের শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে সমালোচনা। ছাত্রদলের এ ভুমিকা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়েই। ক্ষমতার জন্য তারা সবসময়ই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছে। বামপন্থিদের সঙ্গে জোট করার পর তাদের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক সংগঠনের বিরোধীতা শুরু করে। কিন্তু, এই বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয় কি করে? জিয়াউর রহমানের সেই ছাত্রদল কি এখন প্রগতিশীল সাজার চেষ্টা করছে?
কেউ কেউ বলছেন, ছাত্রদলের এই ভুমিকার জন্য শুধু ডাকসুতে নয়, সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তাদেরকে খেসারত দিতে হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি বিষয়টির পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়া না হয়, তাহলে ধর্মবিশ্বাসী সকল ছাত্রসমাজ বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিতে পারে।