অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের মামলায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির (ইটিভি) চিফ রিপোর্টার এম এম সেকান্দারকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদারের আদালতে এ মামলার শুনানি হয়।
এর আগে গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সেকান্দারকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন ওই নারী।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মুহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, সেকান্দারকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়। তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
অভিযোগে ওই নারী বলেন, মামলার আগে তিনি সেকান্দারের যৌন হয়রানির বিষয়ে তিন পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র ইটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জমা দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন সেকান্দার তাকে অনেক আগে থেকেই হয়রানি করছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলেও তিনি তাদের কাছে পাত্তা পাননি।
সেকান্দারের পাশাপাশি একুশে টিভির প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকজন নারী সাংবাদিক বেশ কয়েকদিন ধরে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনছেন। অনেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে চাকরিও ছেড়েছেন। মামলাকারী নারীর যৌন হয়রানীর অভিযোগ পাত্তা না দেয়া এসব যৌন হয়রানীতে বুলবুলেরও জড়িত থাকাই প্রমাণ করে। সাবেক মালিক আব্দুস সালামকে জেলে পাঠিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপে একুশে টিভি দখল হওয়ার পর এর দায়িত্ব পান আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। এরপর একক আধিপত্যে তিনি একুশে টিভিকে একটি যৌন নিপীড়ণের আখড়ায় পরিণত করেছেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিং কোর্স করার সময় সেকান্দারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তার মাধ্যমেই একুশে টিভিতে চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সেকান্দার তাকে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানি করেছেন।
কোনো কারণ ছাড়াই তাকে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে বসিয়ে রাখতেন। এরপর সেকান্দার তার নিজের গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতেও যৌন হয়রানি করতেন। এই কাজে চ্যানেলটির আরও কয়েকজন সেকান্দারকে সহায়তা করতো বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
একুশে টিভির বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ রায় বলেন, “আমাদের ভুক্তভোগী সহকর্মী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের হয়রানি মানা যায় না। আমাদের নারী সহকর্মী সাহস করে প্রতিকার চেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে আছি। আমরাও চাই বিচার।”
এ বিষয়ে চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী শিকাদার বলেন, “আমি অভিযোগটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই বিষয়টি তদন্ত করতে অফিসে একটি কমিটি করে দিয়েছি। নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি।”
তিনি বলেন, “আমি তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ ঘটনাটি ভয়াবহ, সেটি আঁচ করতে পেরেছি। এটা ফৌজদারি অপরাধ। এরপর তিনি মামলা করেছেন। পাশাপাশি সেকান্দারকে শোকজ করা হয়েছে।”
এমডি আরও বলেন, “আমরা ওই নারী সহকর্মীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছি। তার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।”
আরো পড়ুন: সাংবাদিক নেতা বুলবুলের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস (ভিডিও)
আরো পড়ুন: বুলবুলের নারী কেলেঙ্কারিতে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাংবাদিকরা