অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত ৫ বছর শাসনামলে শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। রাশেদ খান মেননকে প্রথমে বিমানমন্ত্রী এবং পরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অভিযোগ উঠলে সেখান থেকে তাকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। আর হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে বিগত ৫ বছরে যত নীতিমালা তৈরি ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবই ছিল স্বাধীন গণমাধ্যম বিরোধী। তথ্যমন্ত্রীর অনেক সিদ্ধান্তের প্রতি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ ছিলেন।
এরপর, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার সময় শরিকদলগুলো থেকে এবার আর কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। যার কারণে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যাননি হাসানুল হক ইনু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়ার পর থেকেই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। বিশেষ করে ‘মন্ত্রী বানানোর শর্ত দিয়ে জোট্ গঠন করা হয়নি’ ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের পর শরিকরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করার পরামর্শও দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের বিরোধীতা প্রকাশ্যে আসতে থাকে।
হাসানুল হক ইনু সেদিন একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংসদে বিরোধীদল নির্ধারণের মালিক আওয়ামী লীগ নয়। আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছি। এখনো জোটবদ্ধ আছি। ভবিষ্যতেও থ্কাবো। আর জাসদের আরেক অংশ মইনুদ্দিন খান বাদলের গ্রুপ সেদিন স্বীকার করেছেন যে, ভোটের আগের রাতে বাক্সে ব্যালট ভরা হয়েছিল। এছাড়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আজ বলেছেন, ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি বাংলাদেশেও সৃষ্টি হতে পারে। জনসমর্থন না থাকলে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি সরকারের জন্য বর্ম হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে অনুসরণ করে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন, বামপন্থীদের প্রতি তাদের সন্দেহ সংশয় আরো আগ থেকেই। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনেকেই মনে করেন যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বামপন্থীরা জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে হাসানুল হক ইনুর নৃত্য প্রদর্শন ও মতিয়া চৌধুরীর শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর বক্তব্যের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো ভুলে যাননি। আর শেখ সেলিম ও মৃত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামতো প্রকাশ্যে বলতেন যে, জাসদ নেতারাই বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। তার এখনো ঘাপটি মেরে আছে। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভা থেকে ইনু-মেননকে বাদ দেয়ার পর তাদেরকে নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতারা দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের ধারণা মন্ত্রিত্ব না পেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তারা বড় ধরণের কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে। নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট ভরে রাখাসহ ভোট চুরির সবকিছু ফাঁস করে দিতে পারে। ইনু-মেনন প্রকাশ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বললেও গোপনে গোপনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছে। এমনকি সরকার বিরোধী আন্দোলনে তারা ড. কামাল হোসেন ও আ স ম রাবকেও উস্কে দিতে পারে। এসব কারণে বামপন্থীদের প্রতি সরকার সতর্ক নজর রাখছে বলেও জানায় সূত্রটি।