অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাইমারি শিক্ষকদের নিয়ে দুদকের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে অ্যানালাইসিস বিডিতে প্রতিবেদন প্রকাশের ৮ দিন পর একই সুরে দুদকের সমালোচনা করেছে আদালতও। ব্যাংকখাতসহ রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট নিয়ে নীরব থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সামান্য প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের পেছনে লাগার পর সংস্থাটির সমালোচনা করে গত ২৯ জানুয়ারি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় অ্যানালাইসিস বিডিতে।
‘রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে, দুদক যাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলে!’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে দুদকের সমালোচনা করে বলা হয় রাষ্টের হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে, শেয়ার বাজার ও রিজার্ভ লুট হচ্ছে, দুদক এসবের কিছু করছে না। তারা দৌড়াচ্ছে প্রাইমারি শিক্ষকদের পিছনে। যাদের দু একটি ক্লাস ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকলেও, টাকা পয়সা আত্মসাতের সুযোগ নেই।
অ্যানালাইসিস বিডিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশের ৮ দিন পর টনক নড়লো আদালতেরও। দুদকের এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যানালাইসিস বিডির সঙ্গে সুর মিলিয়ে আদালতও বলেছে- ‘ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে আর শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক।’
দুদকের কার্যকলাপে ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় বড় রাঘববোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দিয়ে স্কুলশিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক।
যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা।
দুদক দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না উল্লেখ করে আদালত বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে।
এর আগে অ্যানালাইসিস বিডিতে গত ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো-
সরকারের অনুগত দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দিন দিন ব্যাপক সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতির অনুসন্ধানে তিনি সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। ছুটে চলছেন এক জেলা থেকে আরেক জেলা। তিনি এখন এমন ব্যক্তিদের পেছনে লাগছেন যাদের কাজে ফাঁকি দেয়ার কিছু সুযোগ আছে, কিন্তু দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক চাইলেও কোনো টাকা-পয়সা আত্মসাত করতে পারবেন না। কারণ, বেতন ছাড়াতো তাদের কাছে আর কোনো টাকা আসে না। তবে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার একটা সুযোগ তাদের আছে। কিন্তু দুদক চেয়ারম্যান বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরছেন যেন রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই হচ্ছে।
রোববার চট্টগ্রামের ৩টি স্কুলে আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একটি স্কুলে ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জনই অনুপস্থিত ছিল। এটা অবশ্যই বড় ধরণের অন্যায় ও শিক্ষার জন্য খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসলে শিক্ষার নামে কি হচ্ছে সেটা বেরিয়ে এসেছে।
এখন প্রশ্ন হলো-শুধু প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের পেছনে দৌড়ানোই কি দুদকের মূল কাজ?
বিগত কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া দরবেশ নামে খ্যাত সেই সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশেই ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান সরাসরি এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত। অথচ এনিয়ে দুদক নীরব ভুমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে খ্যাত। টিআইবির পক্ষ থেকে কয়েক মাস পর পরই রাষ্ট্রের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিভিন্ন অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি দুদককে।