অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভাষা দিবসের শোকাহত দিনে আরেক শোকের ছায়া নেমেছে বাংলাদেশে। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো জাতি শোকে স্তব্ধ। পুরান ঢাকার চকবাজারে এখন বইছে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। আর যন্ত্রণায় দগ্ধদের আর্ত-চিৎকার ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেলের বাতাস।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পর সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের একটাই প্রশ্ন- পুরান ঢাকায় কেন বার বার এই আগুন? লাশের এই মিছিল আর কত দিন চলবে? সরকার এবং প্রশাসন কি নির্মম এই ট্রাজেডির দায় এড়াতে পারে?
মানুষের এসব প্রশ্নের পেছনে অবশ্য যুক্তি সংগত কারণ রয়েছে। কারণ, নির্মম এই হতাহতের পর সরকারের মন্ত্রী, প্রশাসন ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের বক্তব্যে চরম ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার রাতে আগুন লাগার পরই সবগুলো চ্যানেল লাইভ সম্প্রচার করেছে। ওই সময় মাঝে মধ্যেই বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। আর গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয়রাও বলছেন কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কারণে আগুন দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শত চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তাও বলেছেন-ঘটনাস্থলে অবৈধ কেমিক্যালের মজুদ ছিল। এমনকি আইজিপিও বলেছেন কেমিক্যালের কারণে আগুন বেশি ভয়াবহ হয়েছে।
কিন্তু, সরকারের শিল্পমন্ত্রণায় এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিয়ে তড়িগড়ি একটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আগুনের সঙ্গে কেমিক্যালের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে কেমিক্যালের কোনো গোডাউন ছিল না। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনও বলেছেন, ঘটনাস্থলে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন ছিল না।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড ও মর্মান্তিক এই ট্রাজেডির পর শিল্পমন্ত্রণালয়ের তড়িগড়ি তদন্ত প্রতিবেদন ও মন্ত্রীর বক্তব্যে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এত বড় ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে দিল শিল্প মন্ত্রণালয়? কেমিক্যাল চাপা দিতেই কি শিল্প মন্ত্রণালয়ের এই তড়িগড়ি তদন্ত প্রতিবেদন?
কারণ, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছিল কমপক্ষে ১২৪ জন। ওই আগুনের মূল উৎস ছিল কেমিক্যালের গোডাউন। জানা গেছে, ওই সময় শিল্প মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদন তারা এখনো দেয়নি। কথা ছিল পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যালের গোডাউন সরানো হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এনিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি ঢাকা সিটি করপোরেশন। মেয়র সাঈদ খোকন বললেন- কেমিক্যালের গোডাউনের জন্য আর কাউকে লাইসেন্স দেয়া হবে না।
এখন প্রশ্ন হলো-নিমতলীর ঘটনার ৮ বছর পার হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত কেমিক্যালের গোডাউনগুলো সরানো হলো না কেন? কি কারণে এগুলো এখনো রাখা হয়েছে? এর পেছনে কাদের স্বার্থ জড়িত?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অবৈধ কেমিক্যালের গোডাউন থেকে মেয়র সাঈদ খোকন ও তার ঘনিষ্ঠরা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বখশিস নিচ্ছে। এসব চাঁদার ভাগ পাচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও। এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত আছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের লোকজনও। যার কারণে কেমিক্যালের বিষয়টি চাপা দিতেই শিল্পমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তড়িগড়ি প্রতিবেদন দিয়ে বলা হচ্ছে যে এখানে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন ছিল না।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতেই এখন সরকারের লোকজন ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এ হত্যাকাণ্ডের দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।