অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত সেই তদন্ত রিপোর্টের মুখ দেশবাসী দেখতে পায়নি। কিন্তু চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার আগেই শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ জানালেন- আগুনের সঙ্গে কেমিক্যালের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই এলাকায় কোনো কেমিক্যালের গোডাউন নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনকে রক্ষা করতেই যে শিল্পমন্ত্রী তড়িগড়ি করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
চকবাজারের হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নামের যে ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সেই ভবনটির নিচতলায় বেআইনিভাবে মজুত করে রাখা শত শত দাহ্য রাসায়নিকের কনটেইনার এবং প্যাকেট খুঁজে পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের লালবাগ স্টেশনের কর্মকর্তা রতন কুমার দেবনাথ শুক্রবার বিকেলে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গিয়ে আজ সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ভবনটির নিচতলার গেটের তালা ভেঙে সেখানে রাসায়নিক পদার্থের একটি গুদাম খুঁজে পেয়েছে। তিনি বলেন, ভবনটির নিচতলায় যে এভাবে শত শত দাহ্য রাসায়নিকের কনটেইনার এবং প্যাকেট মজুত করে রাখা হয়েছিল, আগুন নেভানোর সময় তা আমাদের জানা ছিল না।
অপরদিকে, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনে ভস্মীভূত ওয়াহেদ ম্যানশনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল বলে দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান। শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে এসে জুলফিকার রহমান বলেন, ভবনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল। কেমিক্যালের কারণে আগুন এভাবে ছড়িয়েছে, না হলে কখনোই আগুন এভাবে ছড়ায় না।
অথচ শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ বললেন- ওই এলাকাতে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন নেই।
বিশিষ্টজনেরাসহ সচেতন মানুষ বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকনকে রক্ষা করতেই শিল্পমন্ত্রী কেমিক্যাল নিয়ে তড়িগড়ি করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।
কারণ, নিমতলীর ঘটনার পরই সরকার বলেছিল পুরান ঢাকায় আর কেমিক্যালের গোডাউন থাকবে না। কিন্তু বিগত ৮ বছরে একটি গোডাউনও সরানো হয়নি। উল্টো চকবাবাজারে আগুন লাগার আগের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকায় মেয়র সাঈদ খোকন আরও ৫ কেমিক্যাল দোকানের লাইসেন্স দিয়েছেন। আর কেমিক্যালের গোডাউন সরানোর নামে সাঈদ খোকন যে কয়টা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়েছে সবই লোক দেখানো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহেও ভ্রাম্যমান আদালত উদ্বোধনের নামে সাঈদ খোকন পুরান ঢাকায় একটি শোডাউন করেছেন। কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত উদ্বোধনের সংবাদ গণমাধ্যমগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে। কিন্তু ওই এলাকায় বাস্তবে কোনো অভিযান হচ্ছে না।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র হওয়ার পর থেকে সাঈদ খোকন সবক্ষেত্রেই মশা মারতে কামান দাগানোর চেষ্টা করেন। মাস্তান বাহিনী নিয়ে বিশাল বিশাল শোডাউন আর গণমাধ্যমে চাপাবাজি করে যাচ্ছেন। আসলে দক্ষিণ সিটিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
চকাবাজারের আগুনের ঘটনায় সাঈদ খোকন খুব বেকায়দায় আছেন। যেহেতু কেমিক্যালের লাইসেন্সগুলো তিনিই দিয়ে থাকেন। এই হত্যাকাণ্ড থেকে তাকে বাঁচাতেই শিল্পমন্ত্রী কেমিক্যাল নিয়ে মিথ্যা সাফাই গাচ্ছেন।