অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে সব সময়ই বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনার মূল কারণ ও হতাহতের সঠিক সংখ্যা চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আজ পর্যন্ত দেশে যতগুলো বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে একটি ঘটনারও হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি সরকার। সব সময়ই এনিয়ে পরে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের সংখ্যা লুকানোর চেষ্টা করা হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী ঠিকই সঠিক সংখ্যা জানতে পেরেছে। নিমতলি অগ্নিকাণ্ড, তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধ্বস, শাপলা চত্তরে ট্রাজেডিতে যেমনটি করা হয়েছে।
ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ আগুনে নিহতদের সংখ্যা নিয়েও। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী মৃতের সংখ্যা অন্তত ৭০ বলে উল্লেখ করেন। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে সাতজন নারী ও পাঁচটি শিশু রয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই আবার এ সংখ্যা কমিয়ে আনে ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মৃত্যের সংখ্যা ৬৭।
অপরদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা ১১০ জন বলে দাবি করছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ঘটনার পর থেকেই তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সংখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে। কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম টেলিসুরের মতো বিখ্যাত গণমাধ্যম এই সংখ্যা তুলে ধরেছে।
তারা জানায়, ২০১২ সালের পর এটিই ঢাকার সবচাইতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। প্রায় ৩শ বছরের প্রাচীন এলাকায় এই ধরনের অগ্নিকান্ড ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে টেলিসুর জানায়, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে শত শত মানুষকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আগুনের লেলিহান শিখায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি এই সংখ্যা ১১০ বা তারও বেশি।
দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল জানায়, আগুনের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ২শ দমকলকর্মী প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু, কেমিক্যালের আগুন নিভিয়ে আনার সরঞ্জাম না থাকায় তাদের বেশ বেগ পেতে হয়। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে মারা পড়েন ১১০ জন মানুষ।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, মৃতের সংখ্যা ৮০। ফায়ার সার্ভিসের প্রধান আলী আহমদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিবিসির ইংরেজি বিভাগে মৃতের সংখ্যা ৭৮ বলা হয়। বাংলা বিভাগেও একই তথ্য দেওয়া হয়।
এদিকে, নিহতের সংখ্যা প্রথমে ৭৮ বলে পরে এটাকে ৬৭টিতে নিয়ে আসায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনেকে এসেও দুইদিন ধরে খুঁজে তাদের স্বজনদের লাশ না পেয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নিহতদের মধ্যে নোয়াখালীর অধিবাসীর সংখ্যাই বেশি। নোয়াখালীতে শনিবার ১৭ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আরও ৩১ জনের তারা খোঁজ পাচ্ছেন না। এখন সবার প্রশ্ন একটাই- ঢাকা মেডিকেল থেকেই বলা হয়েছিল যে এখানে ৭৮ জনের লাশ রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখন সেই লাশগুলো গেল কোথায়?
আর অতীতেও এমন লাশ লুকানোর ঘটনা ঘটায় সাধারণ মানুষ সরকারি তথ্য ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবরের প্রতি বেশি একটা আস্থা রাখতে পারছে না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ১১০ জন মারা গেছে বলে যে খবর প্রকাশ করেছে সেটাকেই সবাই বিশ্বাস করছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে বলছেন- রানা প্লাজা ধ্বসের পর সরকার হতাহতের সংখ্যা নিয়ে যা করেছিল এখনও তাই করছে। সরকার কেমিক্যালের বিষয়টিকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। সেটা না পেরে এখন লাশের সংখ্যা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।