অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পালওয়ামাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ভারতের ৪০ জন জওয়ান নিহত হয়। এ ঘটনার পর ভারতের ভেতর থেকেই এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা মোদির খেলা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জিও বলছেন- প্রমাণ ছাড়া কোনো দেশকে দায়ী করা ঠিক না। হামলা নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলোও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন যার জবাব মোদির সরকার এখনো দিতে পারেনি।
কিন্তু, এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছেন নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত নয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের কাছে হামলার সঙ্গে তার দেশ জড়িত থাকার প্রমাণও চেয়েছেন। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদি যথাযথ কোনো প্রমাণ না দিয়েই পাকিস্তানকে দোষারুপ করে যাচ্ছেন। হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন পাল্টা প্রতিশোধেরও। ১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই মূলত ভারত-পাকিস্তান আবার নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। হুমকি-পাল্টা হুমকিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে দুই দেশের সীমান্ত। বলা যায় দেশ দুইটিতে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে ভারতের যুদ্ধ বিমান। ভারতের দাবি, নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করেছে। এতে কমপক্ষে ৩০০ লোক নিহত হয়েছে। গণমাধ্যমে হামলার এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই পুরো ভারত জুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে। তারা আনন্দ মিছিলও করেছে। এমনকি একটি জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে উল্লাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
কিন্তু, ভারতের এই আনন্দ-উল্লাস ম্লান হয়ে যায় ক্ষণিকের মধ্যেই।
প্রথমত: ভারত দাবি করেছে যে তাদের বিমান হামলায় ৩০০ নিহত হয়েছে। আর পাকিস্তান বলছে যে, তাদের বিমানের ধাওয়া খেয়ে ভারতের যুদ্ধ বিমান পালিয়ে গেছে। ভারতের হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এরপর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ভারতের হামলায় কেউ নিহত হয়নি। শুধু একজন আহত হয়েছে। এ সংবাদ গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হওয়ার পরই বেকায়দায় পড়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া ভারত তাদের দাবির পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আর হামলার যে ভিডিও ভারত প্রকাশ করেছে সেটাও ৩ বছর আগের। পাকিস্তানি গণমাধ্যম প্রমাণ দিয়ে বলেছে যে, ভারতের প্রকাশিত ভিডিওটি পাকিস্তানের। ৩ বছর ধরেই ভিডিওটি ইউটিউবে ঘুরাফেরা করছে। এখন নরেন্দ্র মোদি কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় ভারতের জনগণও ক্ষুব্ধ হয়েছে মোদির ওপর।
দ্বিতীয়ত: পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতের যুদ্ধ বিমান ঢোকার পরই পাকিস্তান বলেছে-সঠিক সময়ে তারা এর জবাব দেবে। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠকও করেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, তারা যথা সময়ে জবাব দিয়ে ভারতকে চমকে দেবে। একদিনের মাথায়ই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের একাধিক জায়গায় পাকিস্তানি সৈন্যরা শক্তিশালী মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। এরপর বুধবার সকালে পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করে বোমা নিক্ষেপ করেছে। আর সবেচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো- পাকিস্তানি সেনারা বুধবার ভারতীয় দুইটি যুদ্ধ বিমান গুলি করে ধ্বংস করেছে। এতে দুইজন পাইলট নিহত হয়েছে। ভারতের একজন পাইলটকে পাকিস্তান আটকও করেছে। বিমান ধ্বংস ও পাইলট আটকের কথা ভারত প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছে।
ভারত হামলা করেছিল রাতের আঁধারে আর পাকিস্তান হামলা করেছে প্রকাশ্যে দিনের বেলায়। আর ভারত ভাবতেও পারেনি যে, এত তড়িৎ জবাব দেবে পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের হামলা, ভারতীয় দুইটি বিমান ধ্বংস ও পাইলট আটকের সংবাদটি ভিডিও সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশ্লেষক এবং জনগণও এনিয়ে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করতে পারছে না। এছাড়া পরমাণুর ব্যবহার নিয়ে পাকিস্তান জরুরি বৈঠক করায় এনিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের চিন্তাশীলরা। পাকিস্তান আরও বড় ধরণের কিছু করতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যেও। এসব নিয়ে এখন নরেন্দ্র মোদি চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বক্তব্য হলো-পাল্টা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারত। পালওয়ামাতে হামলার জন্য যেখানে বিরোধীদলগুলো মোদিকেই দোষারোপ করছে, সেখানে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তানে হামলার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।
আরেকটি বিষয় হলো-আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তানে হামলা করে মোদি দেখাতে চাচ্ছিলেন যে, তার সরকার দেশকে রক্ষায় সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু ফলাফল এসেছে উল্টো। বিরোধীরাও এখন এনিয়ে সমালোচনায় মুখর হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানে হামলা করে নরেন্দ্র মোদি এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন।