অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম, বর্ণ, মত, পথ, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর লোকদের পড়ালেখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার অধিকার আছে। ঠিক তেমনিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেকটি ছাত্রের নিজস্ব মতপ্রকাশেরও অধিকার আছে। রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে এমন কিছু লেখা নেই যে, অমুক মত বা দলের লোকজন এখানে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে না।
কিন্তু, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো-পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী-রামপন্থীরা তাদের কার্যক্রম অবাধে চালাতে পারলেও ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ছাত্ররা তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে না। বিশেষ করে এদেশের বৃহত্তর ও সুশৃঙ্খল ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা থাকাতো দূরের কথা হলের কোনো ছাত্রকে যদি নামাজ পড়তে দেখে তাহলে তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অমানবিক নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়। ঢাবি ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা প্রায় দিনই ঘটছে। অনেক নিরপরাধ মেধাবী ছাত্রকে তারা শিবির আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দিয়েছে।
কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর ২০১৫ সালে মহসিন হলের ছাত্রলীগের কমিটির উপ মানবসম্পদ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু, গত বছর যখন এই নুরের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকার বলে গালিগালাজ শুরু করে। স্বাধীনতা বিরোধীরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে প্রচার করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে নুরুল হক নুরকে ভিপি হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শিবিরের ভোটে নুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছে বলেও অপপ্রচার চালায় তারা। ছাত্রলীগের দাবি, কোটা আন্দোলনের সব নেতাকর্মী ও সমর্থক সবাই শিবিরের লোক। কোটা আন্দোলনের নামে এখন তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছে।
এরপর, রোকেয়া হলের প্রভোষ্টসহ ভোট ডাকাতিতে জড়িতদের অপসারণ দাবিতে অনশনে বসে ছাত্রীরা। ওই হলের কিছু মেয়ে হিজাব পরে অনশনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু, বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগ সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানী ওইখানে ছাত্রীদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করে। কয়েকজন ছাত্রীর গায়ে বোরকা দেখেই রাব্বানী চরম উত্তেজিত হয়ে উঠে। ওরা ছাত্রীসংস্থার মেয়ে বলেও তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালাগালি করে গোলাম রাব্বানী। গোলাম রাব্বানীর ভাষায়- ছাত্রীসংস্থার মেয়েরা এসব আন্দোলন করছে।
মোটকথা, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করে ছাত্রলীগের ভাষায় তারা সবাই শিবিরের লোক। আর যারা চুপ থাকে তারাই নিরপেক্ষ বা ছাত্রলীগের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে নিয়ে এখন চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছে ছাত্রলীগ। তারা মনে করছে, ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসংস্থার ছেলে-মেয়েরা সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের নাম করে ক্যাম্পাসকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ধারণা, ডাকসু নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হতো তাহলে ঢাবির সকল নেতৃত্ব শিবিরের লোকদের হাতে চলে যেতো। সরকারের পরিবর্তন হলে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে প্রকশ্যে রাজনীতি শুরু করতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।