অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-মানববন্ধন চলছে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছে সারাদেশ। হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই বলছেন-নুসরাতের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। অপরাধীরা ছাড় পাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর বার বার কঠোর শাস্তির কথা বললেও আসলে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সেসব অপরাধীদের বিচার কি হবে? গত দুইদিন ধরে এমন প্রশ্নই শুনা যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মুখে। তারা বলছেন, জনগণের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি সামাল দিতে একটু কঠোরতা দেখাচ্ছেন। সর্বোচ্চ বিচার প্রথম অবস্থায় হয়তো কয়েকজন গ্রেফতার হবে। এরপরই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিছুদিন পর ঘুরে যাবে তদন্তের মোড়। প্রকৃত দোষীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসবে আর কিছু নির্দোষ মানুষ আবার নতুন করে জেল খাটবে।
সাধারণ মানুষের এসব এসব প্রশ্ন তোলার পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, এই ফেনীতেই উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে আগুনে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম হাজারী। নুসরাতের চেয়ে সেই ঘটনাটা আরও বেশি নির্মম ও হৃদয় বিদারক ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত নির্মম এই হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। একরাম হত্যার ঘটনা নুসরাতের চেয়েও আরও বেশি তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। শেখ হাসিনা তখনও আজকের মতো প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বিচারের মুখ আজ পর্যন্ত দেশবাসী দেখতে পায়নি।
একইভাবে নুসরাত হত্যায় যারা ইন্ধনদাতা তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সোনাগাজীর সেই মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, যুবলীগ নেতা সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ, হাফেজ আবদুল কাদের এবং সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলম ও প্রভাষক আবছার উদ্দিনের পক্ষে সাফাই গাইতে মাঠে নেমেছে প্রভাবশালী একটি গ্রুপ। ইতিমধ্যে তারা রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্নাও দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, পরিবেশ এখন ঘোলাটে। এখনই কোন তদবীর চলবে না। পরিবেশ একটু ঠান্ডা হলে তারা তদবীরে নামবে বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, অপরাধীদের ফাসিই হলো নুসরাত হত্যার একমাত্র বিচার। কিন্তু সেটাতো আর হবে না। কারণ, আকাশের তারার চেয়েও আইনের ধারা বেশি। প্রকৃত দোষীরা একদিন আইনের ফাক দিয়েই বেরিয়ে আসবে।