অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক অনেক আগে থেকেই। প্রতি বছরই বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয় নানা সাজে সজ্জিত নারী-পুরুষ-শিশুরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই শোভাযাত্রা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমছে। ধীরে ধীরে কমে আসছে আগের মত জনস্রোত।
২০১৭ তেও বিবিসি বাংলা একটি রিপোর্ট করেছিলো ফেইসবুক লাইভে। সেখানেও বলা হয়েছিলো, পহেলা বৈশাখের জনসমাগম আগের বছরগুলোর তুলনায় এক চতুর্থাংশে এসে নেমেছে।
এই জনসমাগম কমার কারন হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন,বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ধর্মপ্রিয় মুসলমান। বাঙালী সংস্কৃতিতে হিন্দু সংস্কৃতির জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ ঘটানোর ব্যর্থ চেষ্টার ফলে সাধারণ মানুষ এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বয়কট করেছে।
অনেকেই আবার বলছেন,অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভাল নয়। বাড়াবাড়িরও একটা সীমা থাকা উচিত। শাহবাগ আন্দোলনও মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে। একতরফা নির্বাচনে ভোট দেয়া প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ, তাও অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে। ওলামায়ে কেরামকে জঙ্গি প্রমাণের অপচেষ্টাও মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে।
এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও তেমন বেশি মানুষ দেখা য়ায়নি। মানুষের চেয়ে পুলিশই বেশি দেখা গেছে। বিবিসির এক সাক্ষাতকারে সুমাইয়া তাবাসুসম নামে একজন বলেছেন, “আগে এখানে ভিড়ে দাঁড়ানো যেতোনা। এবার মানুষ অনেক কম। তার চাইতে পুলিশ অনেক বেশি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের চাইতে পুলিশের সংখ্যাই বেশি। মনে হচ্ছে এটা পুলিশের শোভাযাত্রা। এটা দেখেই তো ভয় লাগছে”।
বাংলাদেশে বেশ কিছু দৈনিকেও ফুটে উঠেছে একই চিত্র।
দৈনিক কালের কন্ঠের সাক্ষাতকারে একজন বলেছেন “আগে এখানে ভিড়ে দাঁড়ানো যেত না। এবার মানুষ অনেক কম। তার চাইতে পুলিশ অনেক বেশি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের চাইতে পুলিশের সংখ্যাই বেশি। মনে হচ্ছে এটা পুলিশের শোভাযাত্রা”।
১৫ এপ্রিল ২০১৯ দৈনিক জনকণ্ঠ লিখেছে “অতিমাত্রায় কড়াকড়িতে উৎসবের স্বাভাবিক ছন্দ ম্লান”।
সমকাল লিখেছে “কড়া নিরাপত্তায় বর্ষবরণ উৎসব ম্লান”।
তবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি নয় বরং নিরাপত্তাহীনতার জন্যই কমছে জনসমাগম বলে দাবী করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কয়েকজন নারীকে যৌন নিপীড়ন করা হয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারতো দুরের কথা দোষীদের গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন। তাই সাধারন মানুষ পহেলা বৈশাখের উৎসব অনেকটা বয়কট করেছেন।
অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই স্লোগান নিয়ে। কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ই তাদের আলাদা পরিচিতি মুছে দিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে একাকার হয়ে যেতে রাজি নয়। এ কারণে কৌশলে বাঙ্গালী সংস্কৃতি নাম দিয়ে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিকে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদেরকে গেলানোর অপচেষ্টা করেছে এতদিন সেই চিহ্নিত সেক্যুলার সম্প্রদায়টি। তাদের সেই অপকৌশল সাধারণ মানুষ ধরে ফেলতে পেরেছে বলেই তারা মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে দেব-দেবীর ছবি নিয়ে মিছিল করা প্রত্যাখ্যান করেছে।
যারা বিজ্ঞানমনস্কতার নাম করে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে কুসংস্কার বলে আখ্যা দিত, তারাই এখন মঙ্গল কামনার নাম করে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে কুসংস্কারাচ্ছন্ন কর্মকাণ্ডে সামিল হচ্ছে। এতেকরে তাদের ভন্ডামী জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে গেছে।
বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে যা করা হবে তাতে তাদের জীবনাচরণ ও রীতিনীতির ছাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্ম ইসলামকে ব্যঙ্গ করে হিন্দু সংস্কৃতিকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা যে বড় ধরণের বোকামী ছিল তা মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে।