অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অভিনেতা অভিনেত্রীরা সারাজীবন অভিনয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগার করেন। কিন্তু শেষ বয়সে এসে তারা অনেকেই চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত পাতেন। এটা এখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে একটি প্রচলন হয়ে গেছে। তারা আবেদন করার সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী লাখ লাখ টাকা তাদেরকে অনুদান দিয়ে দিচ্ছেন।
এজন্য দেখা গেছে অন্যদের দেখাদেখি অনেকেই টাকার সংকট না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। অথচ এসব দেশের টাকা পাওয়ার কথা উপযুক্ত অসহায় ও যার প্রয়োজন তার কাছেই। যারা প্রাপ্য তারা এই টাকা পাচ্ছেন না, পাচ্ছেন যারা যৌবনকালে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করেছেন তারা। এতে দেশের মানুষ যারপরনাই ক্ষুব্ধ।
গতকালও বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক আহমদ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী তার তহবিল থেকে ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। কিছুদিন পর পরই চলচ্চিত্র অঙ্গনের লোকদের এমন অনুদান দিতে দেখা যায়। এর বাইরে অন্য কাউকে দিতে তেমন দেখা যায় না।
কয়েক মাস আগেই প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পেয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র, চিত্রনায়িকা নূতন ও রেহানা জলি এবং শিল্পী কুদ্দুস বয়াতি। এছাড়া অনুদান পেয়েছেন অভিনেতা আফজাল শরীফ, পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা, চিত্রনায়িকা দিতি, অভিনেত্রী আনোয়ারাসহ অনেকেই।
এসব অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রধানমন্ত্রী হাতভরে দান করলেও, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরন এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তাদেরকে ক্ষতিপূরণের জন্য খুবই সামান্য পরিমান টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেয়নি সরকার। সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলো ক্ষতিপূরণের জন্য রাস্তায় মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে কয়েকবার। আদালতে রীট হয়েছে। এরপরও সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। অথচ যৌবনে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানো খল নায়কদের লাখ লাখ টাকা দিয়ে দিচ্ছেন খুব সহজেই।
সরকারের এহেন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল লিখেছেন-
‘অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যদি অগ্রাধিকার পায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার জন্য দেশের জনগণকে অভিনেতা-অভিনেত্রী হওয়া ছাড়া উপায় আছে কি?’
সেখানে অনেকে ক্ষোভ ঝেড়ে মন্তব্য করেছেন। কুতুবুল আলম নামে একজন লিখেছেন, ‘মিডিয়ার ব্যক্তিরা সারা জীবন আয়ের টাকা দিয়ে কি করে? শেষ দিকে এসে চিকিৎসার জন্য সকলকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত পাততে হয়, অভাব কি শুধু এদেরই দেখা দেয়? এর বাইরে আরো কতো মানুষ টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়,তাদের খোঁজ কে রাখে?
সোহেল রানা লিখেছেন, ‘কোটিপতিদের দেয় কোটি টাকা.. আর আগুনে পুড়ে মরলে তাদের পরিবারকে দেয় ২০ হাজার!’
এম আর ইসলাম লিখেছেন, ‘যাকাতের টাকা গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকারা পাচ্ছে! আর যারা এর উপযুক্ত হকদার তারা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। বাহ! কি চমৎকার!’
প্রধানমন্ত্রীর অনুদান তহবিলে অনেক বৃত্তশালী টাকা দিয়ে থাকেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রয়োজনে দেশের অসহায় মানুষগুলোকে অনুদান দিতে পারেন। আশিকুর রহমান সাগর নামে একজন এ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে কোটি কোটি টাকা দান করার চেয়ে নিজ হাতে অসহায় ও দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করা অনেক ভালো।’