অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাষ্ট্রের চারটি অঙ্গের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো বিচার বিভাগ। আর বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগের পরই বিচার বিভাগের স্থান। বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বিচার বিভাগের এই স্বাধীনতা নিয়ে এখন শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন বা বিশিষ্টজনদের মধ্যেই প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে না, দেশের সাধারণ নাগরিকও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আর এই প্রশ্ন তোলার পেছনেও যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
দেখা গেছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিগত ১০ বছরের শাসনামলে দেশের নি¤œ আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত চলছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। একটি মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে রায় প্রদান, জামিন ও কারামুক্তি সবই হচ্ছে সরকারের ইশারায়। বিশেষ করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে কার মামলার রায় কি হবে? সাজা হবে কত বছরের? কারাগারে পাঠানোর পর জামিন পাবে কিনা? জামিন পাইলেও মুক্তি পাবে কিনা সবই হচ্ছে সরকারের নির্দেশে।
আর উচ্চ আদালতের কোনো রায় যদি সরকারের বিপক্ষে চলে যায় তাহলে বিচারপতিদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়া হয়। যেমন, সংসদ কর্তৃক বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ধারা বাতিলের রায়ের পর যা ঘটেছে তা ছিল নজিরবিহীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের এমন কোনো মন্ত্রী-এমপি বাদ ছিল না যারা সংসদে দাঁড়িয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে গালি দেয়নি। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এক পর্যায়ে তারা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে উচ্চ আদালতে যা ঘটছে তাও নজিরবিহীন। সরকারি দলের সন্ত্রাসী, খুনী, দুর্নীতিবাজরা জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলেও কথিত দুর্নীতি মামলায় আটক খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। এই হলো বর্তমান স্বাধীন বিচার বিভাগের খন্ড চিত্র মাত্র।
কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, এই আদালতের বিচারপতিরাই স্বাধীনভাবে মামলা পরিচালনা করেছেন। রায়ও প্রদান করেছেন স্বাধীনভাবে। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় দিতেও তারা কোনো প্রকার কোণ্ঠাবোধ করেন নি।
যেমন, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আদালতের রায় নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। পরে অন্য একটি মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড ওম্যান’ অর্থাৎ মাথা খারাপ মহিলা বলে মন্তব্য করেছিলেন।
সেই রায়গুলো আজ মানুষের কাছে স্বপ্ন। কারণ, এখন দেশের বিচার বিভাগ আর আগের মতো স্বাধীন নয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বিচারপতিদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন। কিন্তু তাদেরকে যে আদালতে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাস করবে সেই সাহস বর্তমানে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নেই।
গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফোনে যা বলেছেন তা স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য অপমানজনক। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে কি পাবে না সেটা দেখার দায়িত্ব বিচারপতিদের। কিন্তু শেখ হাসিনা রায় দিয়ে দিলেন খালেদা জিয়া আজীবন মুক্তি পাবেন না।
আইনজ্ঞরা বলছেন- শেখ হাসিনার এই বক্তব্য চরম আদালত অবমাননা। কিন্তু, আদালত অবমাননা হলেই বা আর কি। এখন আর সেই বিচারপতি নেই যারা প্রধানমন্ত্রীকে রং হেডেড বলে আখ্যা দেবেন।