অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতাদের দাবি অনুযায়ী আর অল্প কিছু দিন পরই বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে যাবে বাংলাদেশের নাম। মানুষের এমন কোনো অধিকার নেই যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত করেনি। শেখ হাসিনার দাবি-তিনি এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন যেখানে নাগরিকরা তাদের মায়ের গর্ভের মতো নিরাপদে বসবাস করছে। যদিও বাস্তবতার সঙ্গে তাদের বক্তব্যের কোনো মিল খোঁজে পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালে বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধান ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বাস্তবিক অর্থে রাষ্ট্রে আসলে কি হচ্ছে তার একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের মধ্যে যা ঘটেছে সব কিছুরই তিনি একটা সামারি টেনেছেন। রাষ্ট্রের এমন কোনো অসঙ্গতি বাকী নেই যা তার পর্যবেক্ষণে আসেনি।
বিগত ১০ বছর ধরে শুধু ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ কিভাবে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, লুটপাট, দুর্নীতি, খুন, হত্যা, গুম-অপহরণ, বিচারবিভাগ ও সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে কিভাবে বিরোধী দল সমূহের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে তার একটা চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। সবশেষে তিনি মন্তব্য করেছেন-আমরা এখন এমন একটা সমাজে বসবাস করছি যেখানে কোনো ভাল মানুষ কোনো ভাল স্বপ্ন দেখেনা।
সরকারের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্যের কারণে অবশ্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখতে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কোথাও দেখা যায়নি।
এদিকে, প্রায় দুই বছর শেখ হাসিনার উন্নয়নশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটি মন্তব্য এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে। রোববার হাইকোর্ট বলেছেন-এ দেশে এখন বসবাস করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
আর আদালত এই চরম ক্ষোভটা প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে। দেশের সুপরিচিত ৫২ খাবারে মারাত্মক ভেজাল ধরা পড়েছে। আর ৯৬ শতাংশ দুধের ৯৩ শতাংশেই রয়েছে মারাত্মক ক্ষতির রাসায়নিক দ্রব্য। আর ওয়াশার কথিত সুপেয় পানির মধ্যে পাওয়া গেছে বিষ। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ও খাবারের কারণে এদেশে বাস করাটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই তাদের তো এদেশেই থাকতে হবে।
বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ এখন মনে করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সন্ত্রাস, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, গুম, অপহরণ, দুর্নীতি-লুটপাট, ছিনতাই, হামলা, মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন ও জীবন রক্ষার খাবারে অতিমাত্রায় ভেজালে দেশের মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শুধু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো নেতাকর্মীরা এদেশে এখন আর বসবাস করা কারো জন্যই নিরাপদ নয়। দেশ ছেড়ে যাওয়ার মতো যাদের সামর্থ নেই তাদেরকে জীবন হুমকি নিয়ে এদেশেই থাকতে হবে। যেটা হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
তারা বলছেন, শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ এখন বসবাসের অনুপযোগী।
বিএসটিআই কর্তৃক ৫২টি স্বীকৃত ভেজাল পণ্যের তালিকা-
সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, গ্রীণ ব্লিচিং এর সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুড়া, প্রাণের হলুদ গুড়া, ফ্রেশের হলুদ গুড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারী পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুড়া, মিস্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিন যুক্ত লবন, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবন, কিং’য়ের ময়দা, রুপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডস এর সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুড়া, মধুমতির আয়োডিন যুক্ত লবন, সান ফুডের হলুদ গুড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরনের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুড়া, ডলফিনের হলুদের গুড়া, সূর্যের মরিচের গুড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবন, মদীনার আয়োডিন য্ক্তু লবন এবং নুরের আয়োডিন যুক্ত লবন।