অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ কখনো শিল্প নির্ভর ছিল না। দেশটি সব সময় ছিল কৃষি নির্ভর। এদেশের প্রধান ফসল হলো সোনালী ধান। আর বাংলাদেশের কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস হলো ধান উৎপাদন। কিছু কিছু এলাকায় বছরে দুইবার ধান উৎপাদন করা যায়। তবে, অধিকাংশ এলাকায় একবার ইরি-বোরো ধান উৎপাদন করে কৃষকরা। কোনো কারণে যদি এই ধান নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ধানের ন্যায্য মূল্য কৃষকরা না পায় তাহলে তারা একেবারে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। কারণ, অনেকেই সুধী মহাজনদের কাছ থেকে টাকা লগ্নি এনে কৃষি জমি চাষ করে। ঠিক মতো ফসল না হলে কিংবা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলে তারা লগ্নির টাকা পরিশোধ করতে পারে না। পরে জমি বিক্রি করতে হয়।
দেশে শিল্পের বড় বিপ্লব ঘটলেও কৃষির কোনো বিকল্প নেই। কৃষকের মুখে হাসি না ফুটলে পুরো দেশই অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। সেই কৃষকদের ঘরে ঘরে আজ চলছে কান্না আহাজারি। ধান উৎপাদন হওয়ার পরও এবার হতাশায় মলিন হয়ে গেছে কৃষকের চেহারা। কারণ, তারা ধানের সঠিক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
দেখা গেছে, এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা। আর সেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকায়। ধান নিয়ে এখন কৃষকরা চরম সংকটে পড়েছেন। ক্ষোভ আর হতাশায় এখন কৃষকরা তাদের পাকা ধানের জমিতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করছে কৃষকরা।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো- দেশের কৃষকদের এই চরম সংকটের মুহূর্তে সরকারের বাস্তব সম্মত কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বরং খাদ্যমন্ত্রী মশকরা করে বলছেন- কৃষকরা নাকি পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নিজেরা ধানক্ষেতে আগুন দিচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে এরচেয়ে চরম উপহাস আর কি হতে পারে?
দেশের কৃষকরা যখন তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। মানুষের লগ্নির টাকা পরিশোধের জন্য জমি, গরু-ছাগল বিক্রি করতে হচ্ছে, তখন দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের দিকে নজর না দিয়ে সরকার ব্যস্ত ৫-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন দেশে নাকি খুব শিগগিরই ৫-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়-অচিরেই দেশে ৫-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ এর সেবা ব্যবহার করতে শুরু করেছি।
এখন প্রশ্ন হলো- কৃষকের দরকার ধানের ন্যায্য মূল্য। তারা সারাদেশে ৫-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক দিয়ে কি করবে? বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে তারা কি করবে? কৃষকরাতো ওয়াফাই চালাবে না। তারা ৫-জি দিয়ে ধানও উৎপাদন করবে না। তাদের দরকার উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য?
কিন্তু, লন্ডন সফর থেকে আসার পর আজ পর্যন্ত কৃষকদের এই চরম সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে শুনা যায়নি।
কৃষকদের সঙ্গে সরকারের এই আচরণে সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষকরা যদি ধানের ন্যায্য মূল্য না পায় তাহলে আগামীতে তারা ধান উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে। আর ধান উৎপাদন বন্ধ করে দিলে সরকার তখন বুঝবে কয় মাসে বছর যায়।