অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল কর্তৃক নিযুক্ত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিলের সেই দুর্নীতিবাজ সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সালাম এখন চাকরি রক্ষায় গণস্বাক্ষর অভিযানে নেমেছেন। গত ২১ মে ২০১৯ তারিখে তার অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে অ্যানালাইসিস বিডিতে একটি দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে নিজের চাকরি রক্ষায় হাসপাতালের কনসাল্টেন্ট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে নিজের পক্ষে জোরপূর্বক গণস্বাক্ষর নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাসাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে। এরপর থেকেই সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় সুনাম অর্জনকারী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের বেশ কয়েকটি শাখায় নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে নিজের পছন্দের কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন তিনি। তাদের মধ্যে অন্যতম ডা. আব্দুস সালাম। সামীম আফজালের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিলের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে গত ১ মার্চ ২০০৯ তারিখে তিন মাসের জন্য তাকে অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এই অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েই অনিয়ম আর দুর্নীতির হাট খুলে বসেন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুস সালাম। অল্প সময়ের ব্যবধানে কমিশন বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেঙ্কারিসহ অভিযোগের পাহাড় জমেছে এই করিৎকর্মা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আর এসব অনিয়মের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবার চাকরি রক্ষায় জোরপূর্বক গণস্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযানে নেমেছেন আব্দুস সালাম।
সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সামীম আফজাল বিদায় নিলেও তার পছন্দের নিযুক্ত ডা. আব্দুস সালামকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখতে তার তৎপরতা রয়েছে বলে জানা যায়।
আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কর্মকর্তারা জানান, নিজ পুত্র সুলতান মাহমুদ শাকিলকে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে একাধিক স্থানে স্বাক্ষর নিচ্ছেন তিনি। যেখানে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত ডা. আব্দুস সালামকে নির্দোষ ও ষড়যন্ত্রের শিকার বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এই গণস্বাক্ষর অভিযানে আব্দুস সালামের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে তার ছেলে সুলতান মাহমুদ শাকিলের নেতৃত্বে কাজ করছে ব্রাদার তোজাম্মেল, ব্রাদার খাদেম, নার্সিং সুপারভাইজার জাহানারা আক্তার ও রিসিপশনিস্ট আক্তার হোসেন।
এদের মধ্যে নিজ পুত্র সুলতান মাহমুদ শাকিলকে মেইনটেইনেন্স বিভাগে ও রিসিপশনিস্ট আক্তার হোসেনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন আব্দুস সালাম। আর নার্সিং সুপারভাইজার জাহনারা আক্তারের বিরুদ্ধে হাসপাতালের পরিবেশ বিনষ্ট করে সুপার আব্দুস সালামের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বহিরাগত ও অভ্যন্তরীন কিছু নারীদের নিয়ে তার নির্জন কক্ষে আড্ডা ফূর্তির আয়োজনের অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরা প্রত্যেকেই আব্দুস সালামের হয়ে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নামের একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের জন্য নিয়মিত চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।
এমনকি অস্থায়ী সুপার আব্দুস সালামের অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেও নার্সিং সুপারভাইজার জাহনারা আক্তার নার্সদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নামে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।
অ্যানালাইসিস বিডিতে আব্দুস সালামের দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ভালো সাজতে হাসপাতালের স্টাফদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নিজের পক্ষে গণস্বাক্ষর নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন আব্দুস সালাম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। যারা তার পক্ষে এসব স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন তাদেরকেই মূলত আব্দুস সালাম বিভিন্ন সময় তার দুর্নীতি ও অনিয়মের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে আসছে।
এই সিন্ডিকেট বাহিনী হাসপাতালের সুনাম অর্জনকারী কর্মকর্তাদের হয়রানির পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি ধামকিও দিয়ে আসছে।
হাসপাতালের দুর্নীতি অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে দুর্নীতিবাজ আব্দুস সালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সেই সাথে স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বেশ কয়েকজন কনসালটেন্ট।
আরও পড়ুন: আব্দুস সালামের দুর্নীতিতে মতিঝিল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের রেকর্ড