অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
খুন, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, দখল, মারামারির পর এবার চাঁদাবাজি ও কয়েকশ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তাদের চাঁদাবাজির কারণে বন্ধ রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া হল নির্মাণের কাজ। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প এর প্রথম ধাপের ছয়টি হল নির্মাণের ৪শ’ কোটি টাকার দরপত্র ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিনতাই করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর মালিকানাধীন বনানীস্থ ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন কোম্পানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বরাবর লিখিতভাবে এই অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ মে প্রি-টেন্ডার মিটিংয়ে অংশগ্রহণ পূর্বক সিডিউল কিনে ফেরার সময় ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে ২০-৩০ জন যুবক তাদের কাছ থেকে সিডিউল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ফলে তাদের পক্ষে দরপত্র প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র (ইজিবি) আহবান করার অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে প্রকল্প পরিচালকের অনুমতি নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সিডিউল কিনেন কোম্পানীর একজন প্রতিনিধি। তিনি সিডিউল কিনে বের হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারী বেশ কিছু নেতাকর্মী তাদের কাছে সিডিউল দিয়ে দিতে বলেন। তারা বলেন, বিশ্বাস বিল্ডার্সসহ অনেকে আমাদের কাছে সিডিউল জমা দিয়ে গেছে। আপনিও দিয়ে দেন। কালকে আমরা একটা সমঝোতা করে আপনাদের মধ্যেই ছয়জনকে ছয়টা কাজের ব্যবস্থা করে দিব। প্রায় ১ ঘণ্টা বাকবিতন্ডার পর কোম্পানীর প্রতিনিধি ছাত্রলীগের কাছে ঐ সিডিউল দিয়ে দেন।
পরে ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশনের একজন পরিচালক বলেন, আমাদের কাছে থেকে জাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিডিউল ছিনতাই করেছে। কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন ম্যানুয়েল টেন্ডারের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু আমাদের কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। আমরা অনিয়ম রোধে পুনরায় ইজিবি টেন্ডার আহবান করার দাবি জানিয়েছি।
এই পরিচালক আরো বলেন, এখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা জড়িত। বিশ্বাস বিল্ডার্স, মাজেদ এন্ড সন্স, বঙ্গ বিল্ডার্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে সিডিউল কেনার ব্যাংক কার্যালয়ে ছাত্রলীগ শোডাউন দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক গ্রুপের পাশাপাশি বিদ্রোহী গ্রুপ ও সাবেক নেতাদের একটা গ্রুপও তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের জন্য সিডিউল কিনেছে।
অপরদিকে, রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মণানাধীন ড. ওয়াজেদ রিসার্স ইন্সটিটিউটের ভবনের ঠিকাদারী কর্তৃপক্ষের কাছে ছাত্রলীগ সভাপতি আবু মোন্নাফ আল কিবরিয়া ওরফে তুষার কিবরিয়া ১৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় এই জিডি করেন নির্মাণাধীন ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসাইন।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসাইন সাধারণ ডায়েরীতে অভিযোগ করেছেন যে, গত ১২ এপ্রিল বিকেল ৩টায় আমি নির্মাণাধীন ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাইটে অফিস কক্ষে অবস্থান করছিলাম। এসময় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া আমার অফিস কক্ষে এসে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
পাশাপাশি একইদিন সন্ধ্যার মধ্যে ১ লাখ টাকা দাবি করেন এবং বাকি ১৩ লাখ টাকা পরবর্তীতে দিতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যান। এ সময় প্রজেক্টের ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল বাহারকে টাকা দেয়ার চাপও সৃষ্টি করেন ছাত্রলীগ নেতা তুষার কিবরিয়া। এছাড়াও শ্রমিকদের ওপর বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও চাপ প্রদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দিয়ে যান তিনি। এরপর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এর আগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চাদাবাজি টেন্ডারবাজির প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে লাগাতার আন্দোলন করেছে ছাত্রলীগেরই একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জিম্মি করে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্থ করেছিল তারা।
ছাত্রলীগের দাবি-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হলো- ছাত্রলীগ সবসময় বলে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। এসব খুন, হত্যা, মারামারি, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, দখল বাণিজ্য, টেন্ডার ছিনতাই আর চাঁদাবাজি কি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল? কারণ, ছাত্রলীগকে কখনো কোনো গঠনমূলক কাজ করতে দেখা যায়নি। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই শুধু ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্মের সংবাদ দেখা যায়। প্রতিদিনই তারা সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন। শেখ মুজিবুর রহমান কি ভাল কোনো স্বপ্ন দেখেন নি?