অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ আগ থেকেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করে আসছেন যে এবারের ঈদ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদ। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নিরাপদে বাড়ি যাবেন এবং যাত্রায় কোনো প্রকার যানজট হবে না বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।
কিন্তু ঈদ যাত্রার বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শেষদিকে এসে রাস্তায় যানজটের পাশাপাশি এবারের ঈদ যাত্রায় ৫ দিনে সারাদেশে কমপক্ষে ৫৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঈদের দুই দিন আগ থেকেই মানুষ বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। সোমবার কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের গাড়ি চাপায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ৩ জন নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। একই দিন সাভারের ধামরাইয়ে দুইটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে আরও ৪ জন। ওই দিন মোট নিহত হয়েছে ৭ জন।
এরপর, ঈদের আগের দিন মঙ্গলবারে নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জে, নাটোর ও সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ৪৬ জন।
এরপর, ঈদের দিন বুধবার ফরিদপুর, লালমনিরহাট, সাভার ও ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩০ জন।
তারপর, ঈদের পরের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, কুমিল্লা, ভোলা ও লালমনিরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২৫ জন।
এছাড়া, ঈদের তৃতীয় দিন শুক্রবার মাগুরা, নড়াইল, কক্সবাজার, বগুড়া, পিরোজপুর, কুষ্টিয়া ও কুয়াকাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
অপরদিকে, ওবায়দুল কাদের স্বস্তির গান গাইলেও বাস্তবে রাস্তায় যানজট ছিল প্রচণ্ড। দেখা গেছে, যানজটে আটকা পড়ে টাঙ্গাইলে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ডিসি ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। যানজটের কারণে এটাই মনে হয় ইতিহাসের প্রথম গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা।
তারপর, সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট ছিল প্রচণ্ড। দেখা গেছে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে সড়কের অপর পাশে ক্রিকেট খেলেছে।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল, যানজটে আটকা পড়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্ত্বরে একজন নারী রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন। এমন ঘটনা বাংলাদেশে আগে কখনো ঘটেনি। এছাড়া অতি যানজটের কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় আগুন দিয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছে।
কিন্তু, এরপরও ওবায়দুল কাদের তার দপ্তরে বসে বসে দাবি করছেন যে, এবার তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা উপহার দিয়েছেন।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, ঈদ যাত্রায় ৫৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু সড়কে প্রাণ হারানোর পরও যদি এবারের ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়, তাহলে কত মানুষ মরলে ওবায়দুল কাদের এটাকে অস্বস্তিকর বলবেন? সড়কে এতগুলো মানুষ মারা গেল। এরপরও কি ওবায়দুল কাদের তার ব্যর্থতা স্বীকার করবেন না?