অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিচার নিয়ে সরকারের মুখোশ ধীরে ধীরে খসে পড়ছে। প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রীরা হুঙ্কার ছেড়ে ছিলেন যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউ রেহায় পাবে না। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডকে যে আত্মহত্যা বলে বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন সোনাগাজী থানার সেই ওসি মোয়াজ্জেমকে বাঁচানোর জন্য এখন প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত সরকার তাকে গ্রেফতার করেনি। সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন-ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক। তাই তাকে ধরতে সময় লাগছে।
কিন্তু একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম সরকারের আশ্রয়েই আছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ প্রশাসন কর্মকর্তারা জানেন ওসি মোয়াজ্জেম কোথায় আছেন। ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করছে না।
সূত্রটি বলছে, পুলিশের আইজি জাবেদ পাটুয়ারীসহ প্রভাবশালী উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওসি মোয়াজ্জেম থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়েছে। এই টাকা খেয়েই তারা নুসরাত হত্যার চার্জশিট থেকে ওসি মোয়াজ্জেমের নাম বাদ দিয়েছে। এমনকি ওসি মোয়াজ্জেমকে রক্ষায় তারা সরকারের ওপর চাপও সৃষ্টি করেছে। গত ২৯ মে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এরপর গত ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। ওই দিনই আদালত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছায়নি। আদালত তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেও আজ পর্যন্ত সরকার তাকে গ্রেফতার করেনি। এমনকি রংপুরের ডিআইজিসহ প্রশাসনের লোকজন বলছেন ওসি মোয়াজ্জেম নাকি নিখোঁজ আছেন।
আর এখন সরকারের মন্ত্রীরা ওসি মোয়াজ্জেমকে নিয়ে একেকজন একেক ধরণের কথা বলছেন। তারা বলছেন, ওসি মোয়াজ্জেম নাকি পালিয়ে গেছেন। কেউ বলছেন পলাতক হওয়ার কারণে ধরা কঠিন হচ্ছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক নয়, সরকার এবং প্রশাসনের আশ্রয়েই আছেন। তাকে রক্ষায় এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের লোকজন উঠেপড়ে লেগেছে। জানা গেছে, তাকে নিয়ে যদি সরকারের ওপর চাপ বেড়ে যায় তাহলে তাকে গ্রেফতার দেখাবে সরকার।