অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বরগুনায় প্রকাশ্যে দিবালোকে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার পর সমাজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের। ক্ষুব্দ হয়ে দুই বিচারপতি বলেছেন- সমাজটা কোথায় যাচ্ছে? দেশের জনগণতো এমন ছিল না।
আদালত অবমাননার ভয়ে দুই বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। শুধু সমালোচনাই হচ্ছে না, দুই বিচারপতিকে সাধারণ মানুষ অশালীন ভাষায়ও গালাগালি করছেন।
অনেকেই দুই বিচারপতিকে প্রশ্ন করে বলছেন, আপনাদের আদালত কোথায় যাচ্ছে? জনগণ ভালই ছিল, খুনীদেরকে রেহায় দিয়ে আপনারাই সমাজটাকে নষ্ট করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, নষ্ট সমাজকে ভাল করতে হলে আগে আপনাদের শরীর থেকে মুজিবকোর্ট খুলে ফেলতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, আদালতও একসময় এমন ছিল না। আপনারা নষ্ট হওয়ার কারণেই সমাজটা নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেকে বলছেন, সমাজ কোথায় যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার আদালতের নেই। খুনী সন্ত্রাসীদেরকে মাফ করে দিয়ে এখন আপনারা এমন প্রশ্ন করছেন কেন?
হাইকোর্টের মাননীয় দুই বিচারপতি বর্তমান সমাজের অবস্থা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন সেটা আসলেই কতটুকু যুক্তিসংগত? সমাজটা কি একদিনেই নষ্ট হয়ে গেছে? দেশের জনগণতো একসময় ভাল ছিল, কিন্তু আজ এত খারাপ হলো কেন? কোন দুঃসাহসে এভাবে প্রকাশ্যে একজন মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারতে?
বিগত দিনের আদালতের কার্যক্রমের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সমাজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মাননীয় দুই বিচারপতির প্রশ্ন কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। বলা যায়-এমন প্রশ্ন তোলার মতো কোনো নৈতিক অধিকারও নেই হাইকোর্টের।
কারণ, বাংলাদেশে যে কয়টি নৃশংস, নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিনে দুপুরে বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা অন্যতম। নির্মম এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব পর্যন্ত স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল।
এই ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড দিলে ২০১৭ সালের আগস্টে হাইকোর্ট ৬ ছাত্রলীগ নেতাকে মৃত্যুদ- থেকে রেহাই দেন। আজকে যারা সমাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেদিন তাদেরই দুই সহকর্মী বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ৬ খুনীকে মৃত্যুদ- থেকে রেহাই দিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, বিশ্বজিতের খুনীরা যদি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থেকে রেহাই না পেতো তাহলে বরগুনায় আবার প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যার সাহস পেতো না সন্ত্রাসীরা। কারণ, তারা জানে যে নিম্ন আদালত শাস্তি দিলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে ছাড়া পাওয়া যাবে।
সাধারণ মানুষও বলছেন, বিচারহীনতার কারণেই আজ সমাজের এই অবস্থা। আদালত থেকে যদি খুনীরা পার না পেতো তাহলে সন্ত্রাসীরা এতটা বেপরোয়া উঠতে পারতো না। বিশ্বজিতের খুনীদের রেহাই দিয়ে এখন আদালতের এমন প্রশ্ন হাস্যকর।