অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন এ বছর টঙ্গির আল জামিয়াতুল উসমানিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। গত ৩ জুলাই ড. মোবারক তার ফেসবুকে দেয়া পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়ে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
শিবির সভাপতি ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার সাথে সাথেই এনিয়ে কওমী মাদরাসার কিছু আলেম ফেসবুকে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কুরআনের ভাষায় যেটাকে বলে ফেতনা। তাদের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে, ড. মোবারক কওমী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস পাস করায় কওমী মাদরাসা নাপাক হয়ে গেছে। ব্যক্তির বিষয়টিকে নিয়ে এখন রাজনীতি করণও করছেন তারা।
দেখা গেছে, বিশেষ করে কওমী আলেম ও হেফাজত নেতা হিসেবে পরিচিত ওয়ালী উল্লাহ আরমান মূলত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টিকে উস্কে দিচ্ছেন। তিনি এখন সরাসির ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেছেন। আরমানের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখে জানা যায়, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে পড়েছেন বা পড়ছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ওয়ালী উল্লাহ আরমানের ছাত্রজীবন থেকে শুরু হেফাজতের রাজনীতিসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া হিন্দুদের গোলাম নামে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ও কথিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদও এনিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেছে। কওমী মাদরাসাকে ধ্বংস করতে জামায়াত শিবির ষড়যন্ত্র করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
কওমী আলেমদের মতে, ড. মোবারক হোসাইন দাওরায়ে হাদীস পাস করে চরম অন্যায় করেছেন। এটা নাকি তাদের তরবিয়াত পরিপন্থী। কিন্তু তাদের এই যুক্তির নিরিখে টিকে না।
জানা গেছে, ড. মোবারক রুজি-রোজগারের জন্য দাওরায়ে হাদীসের এই সনদ অর্জন করেননি। তিনি ভারতের সনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছেন। যেটাকে বলা হয় শিক্ষার সর্বোচ্চ। পড়ালেখার প্রতি আগ্রত থেকেই তিনি এই ডিগ্রী নিয়েছেন। এই সহজ বিষয়টাকে না বুঝে কওমী আলেমরা অহেতুক ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছেন।
দ্বিতীয়ত: ড. মোবারকের এই ডিগ্রী নেয়াতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। দাওরায়ে হাদীস মাস্টার্সের সমমান। যেকোনো শিক্ষার্থী ডিগ্রী পাস করেই মাস্টার্স করতে পারে। এমনকি একাধিক বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারে। ড. মোবারক দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় দেয়ায় আইন লঙ্ঘন হয়নি। কারণ, কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডতো এমন কোনো আইন করেনি যে, অন্যকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা দিতে পারবে না। ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কওমী আলেমরা এত সহজ বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছে না।
সচেতন মহল বলছেন, আসলে এসব হলো একটা ইস্যু। মূল বিষয় হলো ড. মোবারক হোসাইন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি। এটাই তারা সহ্য করতে পারছে না। যার কারণে তারা এখন ফেসবুকে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তারা বলছেন, জামায়াত-শিবির নিয়ে কওমী আলেম ওলামাদের এলার্জি নতুন নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরেই বই-পুস্তক, সভা-সমাবেশে জামায়াত-শিবিরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে আসছে। তাদের অনেক পীর-বুজুর্গ জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতে দিতে দুনিয়া ত্যাগ করেছে। দেখা গেছে তাদের ফতোয়ায় জামায়াত শিবিরের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা যত অপপ্রচার করেছে জামায়াত শিবির তত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে ২০০০ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার আল্লামা শাইখুল হাদীসসহ তাদের বিশিষ্ট আলেমদেরকে কারাগারে ভরে আচ্ছা মতো পিটিয়েছে তখন তারা জামায়াত শিবিরের গুরুত্ব বুজতে পেরেছে।
তারপর, তারা আজ দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলছে। এই স্বীকৃতির জন্য প্রথম মন্ত্রীসভা বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। আর প্রথমে সংসদে প্রস্তাব এনে ছিলেন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। অথচ বিষয়টিকে আজ তারা বেমালুম ভুলে গেছে।