অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজনৈতিক মহলে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে-আওয়ামী লীগে কোনো বিবেক সম্পন্ন ও সুস্থ মানুষ নেই। অথবা যারা বিবেক সম্পন্ন ও মানসিকভাবে সুস্থ তারা আওয়ামী লীগ করে না। বিভিন্ন সময় অওয়ামী লীগ নেতাদের অহেতুক কর্মকাণ্ডে প্রচলিত এ প্রবাদের সত্যতা আংশিক খুঁজে পেলেও এখন শতভাগ সত্যতা দেখা যাচ্ছে।
বিবেকবান, বোধশক্তি সম্পন্ন ও সুস্থ মানসিকতার লোক এখন আওয়ামী লীগে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দেখা যাচ্ছে, দিন যত যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে এখন মেন্টাল তথা পাগলের সংখ্যা ততই বাড়ছে। তাই অনেকেই হাস্যরস করে বলছেন এ যেন এক পাগলের কারখানা।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে ডেঙ্গু মশার উৎপাত শুরু হয়। দুই সিটিতে মশা নিধনের ওষুধ না ছিটানোর কারণে এ মশা দিন দিন বাড়তে থাকে। দুই মেয়রের দুর্নীতি, আত্মসাত, খামখেয়ালি আর নাগরিকদের প্রতি চরম অবহেলার কারণে ডেঙ্গু এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন ২ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছে। যদিও সরকার এসব মৃত্যুর সংখ্যা অস্বীকার করছে।
আর সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-ডেঙ্গু মহামারি নিয়ে দেশের মানুষ যখন আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা এ নিয়ে জনগণের সঙ্গে চরম তামাশা ও মশকরা করে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসের ২৫ তারিখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক বলেছিলেন-রোহিঙ্গাদের মতো এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা বেশি। রোহিঙ্গারা যেমন বেশি বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে তেমনি এডিস মশাও বেশি জন্ম দিচ্ছে। তাই এই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। একই দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ডেঙ্গু একটা গুজব। গণমাধ্যমগুলো ডেঙ্গু নিয়ে যা প্রচার করছে বাস্তবে এমন ধরণের কিছু নেই।
এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও খোকনের বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সর্বস্তরের মানুষ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লন্ডন থেকে শেখ হাসিনা তাদেরকে কথা কম বলার পরামর্শ দেন। ওবায়দুল কাদেরও সংবাদ সম্মেলন ডেকে মন্ত্রী ও মেয়রকে সতর্ক করে দেন।
কিন্তু, মানুষের সেই ক্ষোভের রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার আওয়ামী এমপি কণ্ঠশিল্পি মমতাজ পুনরায় বললেন-ডেঙ্গু একটা গুজব। ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। মমতাজের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে আবার বইছে সমালোচনার ঝড়।
এরপর দুই দিন পর বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ে মন্তব্য করে আগের তিনজনকেই ছাপিয়ে গেলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এই ডেঙ্গু মহামারিকে তিনি উন্নয়নের অংশ বলেই দাবি করছেন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, দেশ যত উন্নত হবে মানুষের সমস্যা তত বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত হচ্ছে সে দেশে তত রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু এলিট শ্রেণির একটি মশা। এ মশা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা শহরে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে। তাই এখন দেশে ডেঙ্গু এসেছে। মানুষের যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে তত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুনে দেশের সাধারন মানুষ নির্বাক হয়ে গেছে। উন্নয়ন হলে দেশে রোগবালাই বাড়ে! দেশ উন্নত হওয়ার কারণেই ডেঙ্গু মশা আসছে! সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন মুখ থেকে এসব কথা কিভাবে আসতে পারে? তাহলে সরকার কি জনসংখ্যা কমানোর জন্য দেশ উন্নত করছে?
সচেতন মহল বলছেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস নিয়ে জামায়াত শিবিরকে জড়িয়ে হাইস্যকর মন্তব্য করে পাগলের সূচনা করেছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। এরপর থেকে যেন সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গুকে একজন রোঙ্গিহাদের সাথে তুলনা করছেন, আর দুইজন বলছেন গুজব। এবং সর্বশেষ একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বললেন এটা উন্নয়নের অংশ। এতে বুঝাে যাচ্ছে-আওয়ামী লীগে দিন দিন পাগলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।