অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের দাবি-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বর্তমান সরকার খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী এখন বাংলাদেশের সুনাম বাতাসের সঙ্গে বয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ এখন এমনই শক্তিশালী দেশ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লোকজন এখন আর খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনের সঙ্গে তো বাংলাদেশের সম্পর্ক অতি উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু, বাস্তবতা কি তা বলে?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চীন-ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের একতরফা সম্পর্ক চলছে। একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক হয় আদান-প্রদানের মাধ্যমে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে। একজনের বিপদের সময় অন্যজন এগিয়ে আসবে। সহযোগিতা করবে। কিন্তু, শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত চীন-ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। দুইটি দেশের জন্য শেখ হাসিনা সব কিছু উজার করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে তিনি দেশ দুইটি থেকে বাস্তব সম্মত কোনো সহযোগিতা পাননি। যার বাস্তব প্রমাণ রোহিঙ্গা ইস্যু। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, উচ্চমাত্রার বিদেশি বন্ধুরা শেখ হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হলো মিয়ানমার থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে তখন তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। এখন এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত নেয়া বা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে কোনো সহযোগিতাই করছে না। রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর তারা কার্যকর কোনো চাপ দিচ্ছে না। এমনকি শেখ হাসিনার উচ্চমাত্রার দুই বন্ধু চীন-ভারতও এনিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে। শুধু নিরব ভূমিকা বললে ভুল হবে, দেশ দুইটি সরাসরি মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা প্রতিনিয়ত বলে বেড়াচ্ছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরকার এক করতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার দাবি, দুনিয়ার সব মানুষ নাকি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
দেখা গেছে, গত নভেম্বরে প্রথম দফায় কয়েকশ রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। রোহিঙ্গরা তাদের নাগরিকত্ব চাচ্ছেন। কিন্তু মিয়ানমার সরকার সেটা দিতে রাজি নয়। যার কারণে রোহিঙ্গারা আর নিজ দেশে যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এনিয়ে আর কিছু বলেনি।
এরপর গত ২২ আগস্ট আড়াই হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ ছিল। বাংলাদেশ মিয়ানমারের হাতে তাদের তালিকাও দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের এক দফা দাবিও মানেনি। যার কারণে এবারও কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি হয়নি।
জানা গেছে, চীন-ভারতের পরামর্শেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের রেখে আসা রাখাইনে দেশ দুইটিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সুযোগ করে দেবে মিয়ানমার সরকার।
আর গত ২২ আগস্ট মিয়ানমারের নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের সেনা প্রদানের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, রোহঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিয়ানমারের ওপর চাপ দিলে চীন তা সহ্য করবে না।
তাই কুটনিতিক মহল বলছেন, ভারত এবং চীনকে বাংলাদেশ বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করে। কিন্তু সে বন্ধুত্বের মধ্যে অনেক শর্ত বিরাজমান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ দুটি দেশকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা কূটনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকার মনে করে ভারত ও চীন এ সংকট সমাধানের জন্য কাজ করছে তাহলে সেটা ভুল। আসলে ভারত ও চীন শেখ হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।