অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার কারাগারে আটক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির পাবনা সদরের স্মরণকালের উন্নয়নের প্রকৃত রূপকার হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহান গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায়।
শেখ হাসিনার তৈরি করা কথিত যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই শেখ হাসিনা কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও বায়বীয় অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে তাকে কারাবন্দী করে রেখেছে। মাওলানা সোবহানের আদর্শ, নীতি, সততা, এলাকার উন্নয়ন এবং বিশাল জনপ্রিয়তাই হলো বড় অপরাধ। এই অপরাধেই তিনি আজ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে কারাগারে পড়ে গিয়ে বাম হাতে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছেন মাওলানা আব্দুস সোবহান। কিন্তু, এত বড় একটা আঘাত পাওয়ার পরও কারারক্ষীরা তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। এ নিয়ে আইজি (প্রিজন্স) অফিস ও আদালতে দুই মাস দৌড়াদৌড়ির পর তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
সচেতন মহল বলছে, ৯২ বছর বয়সের এমন একজন বয়ো:বৃদ্ধ আলেমের সঙ্গে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে বর্বরোচিত ও অমানবিক আচরণ করেছে তা নজিরবিহীন। হাসপাতালের বেডে মাওলানা সোবহানকে হাসিনার পুলিশ বাহিনী হাতে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছবি দেখে নিষ্ঠুর জালিম, স্বৈরাচারী হাসিনাকে ধিক্কার জানানোর ভাষা মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না।
তার ভক্তরা এই ছবি শেয়ার করে তাদের মনের আকুতি জানিয়েছেন। অনেকেই লিখেছেন, প্রতিহিংসারও তো একটা সীমা থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা সকল সীমা অতিক্রম করেছে।
আল মামুন নামে একজন লিখেছেন, এই অবিচারের শেষ কোথায়? এ দৃশ্য দেখার পরও কি এমপিদের মান যায় না! বর্তমান এমপিরাও একদিন সাবেক হবেন। তখন যদি তাদেরকেও রাজনৈতিক রোষানলে এভাবে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখে কেউ, তবে কি তখন তাদের ভালো লাগবে? তাদের মান সম্মানের হানি হবেনা?
কার নির্দেশে এবং কেন একজন সাবেক এমপিকে হাতকড়া পরানো হলো তা আপনারা খতিয়ে দেখুন। মেহেরবানী করে মনে রাখবেন, সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায় আর হিংসা বিদ্বেষ শত্রুতা ছড়ালে সেটাই মেলে। ইতিহাস কিন্তু তা-ই বলে।
শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষনেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যার কথা কি শেখ হাসিনা ভুলে গেছে? ভুলে গেলে চলবে না। ফাঁসির এই রশিগুলো শেখ হাসিনার জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা কি ভুলে গেছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের সেই নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা? সেদিন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কুলাঙ্গার নরপশুরা শেখ হাসিনার নির্দেশেই পল্টনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদেরকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। শেখ হাসিনা সেই দৃশ্য ভুলে গেলেও এদেশের মানুষ কিন্তু ভুলে যায়নি।
শেখ হাসিনা কি ভুলে গেছে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানার সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা? সেদিন দাদা বাবুদের নির্দেশে শেখ হাসিনাই দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছিল। শেখ হাসিনা ভুলে গেলেও মানুষ কিন্তু ভুলে যায়নি।
বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী, অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমী, মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র আল মোকাদ্দেস ও অলিউল্লা, ছাত্রদল নেতা নুরসহ বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের হাজারো নেতাকর্মীকে গুম করে হত্যার কথা কি শেখ হাসিনা ভুলে গেছে? এসব ভুলে থাকা যাবে না। এদেশের মানুষ একদিন সবগুলো হত্যাকাণ্ডই শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে।
অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনা মনে করছে ক্ষমতা তার চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। এটা তার ভুল হিসাব। ক্ষমতা তাকে একদিন ছাড়তেই হবে। আর ক্ষমতা ছাড়ার পরই শুরু হবে তার জবাবদিহীতার পর্ব। আজকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদেরকে তিনি যেভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও অপমান করছে, এ পরিস্থিতির শিকার একদিন তাকেও হতে হবে। অগণিত মানুষ হত্যার দায়ে তাকে একদিন হাতে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরতে হতে পারে।