অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ নেতাদের শতাধিক অবৈধ জুয়া ও মদের আসর নিয়ে সারাদেশে চলছে তোলপাড়। অস্ত্র, নারী, জুয়ার সামগ্রী ও মদসহ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ গ্রেফতার হলেও রাজধানীতে ক্যাসিনো সম্রাট হিসেবে পরিচিত মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেই ইসমাইল হোসেন সম্রাট এখনো ধরা-ছোয়ার বাইরে। গ্রেফতার এড়াতে তিনি সহস্রাধিক নেতাকর্মীর পাহারায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ১০ বছর ধরে যুবলীগ নেতারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসব অবৈধ জুয়া ও মদের আসর পরিচালনা করে আসছেন। সেগুন বাগিচার একটি জুয়ার আসরে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও আসা-যাওয়া করতেন। রাজধানীর এসব মদ ও জুয়ার আসর থেকে যুবলীগ নেতাদের প্রতিদিনের আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছরে আয় হয় ৪৩০ কোটি টাকা। এভাবে তারা ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতো টাকা কাদের পকেটে যায়?
এই প্রশ্নের অনেকটা উত্তর মেলে খালেদ মাহমুদের জবানবন্দিতে। তিনি বলেন, যে আয় আসে তার একটি বড় অংশ যায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে। এছাড়া ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। এবং তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
এদিকে র্যাবের মহাপরিচাল থেকে শুরু করে যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতারা পর্যন্ত একের পর এক অস্বিকার করে বলেই চলছেন তারা এসব বিষয়ে কোন কিছুই জানেনা। এসব নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ও নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এমপি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব জুয়া ও মদের আসরের বিষয়ে আগে থেকেই জানেন।
জানা যায়, র্যাবের মহাপরিচারক বেনজির আহমদ এসব ক্যাসিনোর বিষয়ে আগেই জানেন। র্যাবের অনেক কর্মকর্তা মাঝে মধ্যে এসব আসরে যাতায়াতও করেন। আর প্রতিমাসে এসব থেকে তারা মোটা অংকের টাকা পান। যার কারণে তারা এসব অবৈধ মদ-জুয়ার আসরের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যায়নি।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম ভিত্তিহীন কথা বলছেন বলে মনে করছে সচেতন মহল। তারা বলছেন, ঢাকা শহরে শতাধিকের বেশি অবৈধ ক্যাসিনো চলে আর পুলিশ জানে না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। তারা এখান থেকে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে। এছাড়া খালেদ নিজেও এ বিষয়ে স্বিকারক্তি দিয়েছেন।
এরপর, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও দাবী করেছেন, যুবলীগ নেতাদের এসব ক্যাসিনো বিষয়ে তার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতারা যেসব অপরাধ কর্মকাণ্ড করতেছে সবগুলোর সঙ্গেই ওমর ফারুক চৌধুরী জড়িত। যত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা আছে সবগুলো থেকেই মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে ওমর ফারুক চৌধুরী। নিজেকে রক্ষার জন্য এখন তিনি বড় গলাই কথা বলছেন। নিজের পদ রক্ষায় নেত্রীকে খুশি করতে তিনি কয়েক দিন ধরেই যুবলীগ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। যুবলীগের একাধিক নেতা বলেছেন, ওমর ফারুক চৌধুরী হলেন সব অপকমর্রে মূল হোতা। সব কিছু থেকেই তিনি ভাগ পাচ্ছেন। ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও খালেদ মাহমুদের অবৈধ ক্যাসিনোর বিষয়ে তিনি সবই জানেন। কিন্তু এখন মুখ খলছেন না।
এছাড়া ফকিরাপুলের সেই ইয়ংমেন্স ক্লাবের চেয়ারম্যান হলেন কমিউনিস্ট নেতা রাশেদ খান মেনন। গতকাল তিনিও এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবী করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ক্লাব থেকে প্রতিমাসে যত অবৈধ টাকা আয় হয় তার ভাগ রাশেন খান মেননের পকেটেও যায়।
এদিকে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ কমলাপুরে একটি টর্চার সেলও রয়েছে। যেসব ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করে তাদেরকে সেখানে নিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতো এই যুবলীগ নেতা।
বুধবার রাতে খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতারের সময় অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যায়। এছাড়া তার ক্যাসিনো থেকে নারী, মদসহ নিষিদ্ধ বস্তু উদ্ধার করে র্যাব।
বুধবার রাতে দীর্ঘ অভিযান শেষে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত র্যাব-৩ এর হেফাজতে ছিলেন খালেদ।
এরপর ফকিরাপুলের ইয়াংমেন ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যাব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঐদিন রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।