অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চার দিনের সরকারি সফরে ভারতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফর নিয়ে কয়েক মাস ধরেই দেশের রাজনীতি উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে। শেখ হাসিনার এই সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২টি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে এবারও কিছু হবে না। এরপর বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো রোহিঙ্গা সংকট। এক্ষেত্রে ভারত বরাবরই মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শেখ হাসিনাকে শান্তনা দেয়ার জন্য মূলত মাঝে মধ্যে কিছু ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়ে থাকে।
তবে, ভারত সফরে শেখ হাসিনার সব ইস্যুকে ছাপিয়ে গেছে ভারতের বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের বিমানবন্দরে নেমেই এক চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন শেখ হাসিনা।
দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ভারতের বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদেরকে বহনকারী বিমানটি। শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গী ও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছিলেন-হয়তো স্বাগত জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই আসতে পারেন। আর কোনো মোদি আসতে না পারলেও কমপক্ষে একাধিক মন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসবেন শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য।
কিন্তু, তাদের আশায় গুড়েবালি। নরেন্দ্র মোদি নিজে আসবেতো দূরের কথা একজন কেন্দ্রীয় পূর্ণ মন্ত্রীকেও পাঠান নি তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দেশটির শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী বিমানবন্দরে এসেছিলেন। এমনকি এসময় ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও আসেননি বিমানবন্দরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের এমন আচরণে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মন ক্ষুন্ন করেননি, তার সফরসঙ্গী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা এটাকে অপমানজনক বলে মনে করছেন। বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা ভারত যাওয়ার আওয়ামী লীগের নেতারা শুক্রবার রাত পর্যন্ত এসব নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তার এক প্রকার নিরবতাই পালন করছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আশবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা এবং গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন, তিনবিঘা করিডোরের মালিকানা আদায়সহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা বিরাজমান রয়েছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী এবার ভারত সফরে গিয়ে তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানিবণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এবং বাংলাদেশের স্বার্থ আদায় করেই দেশে ফিরবেন।
তিনি বলেন, গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সমস্যা বহু পুরনো। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ভারত সরকার বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে আসছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট ও বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহারের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছ থেকে তাদের স্বার্থ আদায় করে নিলেও তার বিনিময় তারা বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি। ট্রানজিট, করিডোর, বেরুবাড়ীর বিনিময়ে তারা বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি। ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ বন্যার পানিতে ভাসছে। গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার কারণে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বাংলাদেশ পানির অভাবে, খড়ায় শুকিয়ে মরছে। মাঝে মধ্যে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করছে ও আহত করছে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নাগরিকত্ব তালিকা করে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে সে দেশের মুসলমানদের নাগরিকত্ববিহীন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য ভারত সরকারের মন্ত্রী ও বিজেপির নেতারা মাঝে মধ্যেই হুমকি দিচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ভারত মৌখিক সমর্থন দিলেও তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
জামায়াত মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার ভারত সফরে গেলেও ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক ফলাফল বহন করে আনতে পারেননি। ভারতের সাথে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও তা থেকে বাংলাদেশ প্রকৃত পক্ষে লাভবান হয়নি। ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে তার ভারত সফর সম্পর্কে বক্তব্য দিলেও তার সফর থেকে বাংলাদেশ কি পেল, ভারতকে কি দিল? সে সম্পর্কে খোলাসা করে কোনো কথা না বলার কারণে বাংলাদেশের জনগণ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে।